সাভারের চামড়া শিল্প নগরী বন্ধ করে দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না করায় কমিটি থেকে এই সুপারিশ করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) চিঠি দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সংসদীয় কমিটি বলেছে, পরিবেশ দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার পর আবারও চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ আসে। সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, মো. রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশ নেন।
সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়কে জানায়, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়। যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটারের, অর্থাৎ দৈনিক ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিবেশে মিশছে। গত তিন বছরে এক কোটি ৬৪ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে গেছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সাভারের ট্যানারি শিল্প নগরী পরিদর্শন করেছিলাম। এছাড়া পরিবেশ অধিদফতর একাধিকবার পরিদর্শনে গিয়েছে। যেটা দেখা গেছে তা হলো, যে পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে, উৎপাদন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। জরিমানা বিভিন্ন সময় করা হয়। কিন্তু সেটা কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। এ জন্য আমরা বন্ধ করে দিতে বলেছি।
সাবের হোসেন বলেন, তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা রয়েছে সাভারে। হেভি মেটাল এবং ক্রোমিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনও ব্যবস্থাই নেই। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, দূষণ কমানোর জন্যই হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি আনা হলো। কিন্তু দূষণতো কমলো না। তাহলে আমরা এটা করতে গেলাম কেন? ট্যানারি পরিচালনার জন্য প্রতিবছর যে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হয় তা নবায়ণ না করতেও কমিটি সুপারিশ করেছে।
চামড়া শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিবেশে উন্নীত করতে ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় বিসিক। হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের অনিহার পরও ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেখানে যেতে বাধ্য হতে হয়। শুরুতে শর্ত ছিল শিল্পনগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ট্যানারিগুলো নিজেরাই ইটিপি স্থাপন করবে। কিন্তু ট্যানারিগুলো তা না করায় শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১০ সালে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৫৪৫ কোটি টাকা।
এরই মধ্যে শিল্পনগরীর কোনও সুবিধাই নিশ্চিত না করে ট্যানারিগুলোকে বারবার স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দিতে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় উচ্চ আদালত হাজারীবাগের কারখানাগুলোর গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেওয়ার পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে কারখানাগুলো একযাগে স্থানান্তরিত হয়।
সিইটিপির বিভিন্ন কম্পোনেন্টের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই ১৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন শুরু করে। আগে হাজারীবাগের বর্জ্য ও দূষিত কেমিক্যালস বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে মিশ্রিত হতো, এখন সাভারের চামড়া শিল্পের দূষণ ধলেশ্বরী নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.