দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল ফোরকানের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান ভাই অনলাইনে বিভিন্ন সিক্রেট অ্যাপ ব্যবহার করে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন। তারই নির্দেশনায় গত কয়েক বছরে ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় নব্য জেএমবির সদস্যরা।

সবশেষ এই ফোরকান ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সঙ্গে বিস্ফোরক যুক্ত করে হামলার পরিকল্পনার পাশাপাশি নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। আর সংগঠনের আমিরের নির্দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসব হামলায় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন তিনি।

আজ বুধবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিটের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক ও বোমা প্রস্তুতকারকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে।

বুধবার রাতে রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান ভাই, সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, জিআই পাইপ, রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, লোহার বল, সাংগঠনিক কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, অনলাইনে বিভিন্ন সিক্রেট অ্যাপ ব্যবহার করে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিত ফোরকান। গত কয়েক বছরে ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় নব্য জেএমবির সদস্যরা। বোমাগুলো ছিল একই প্যাটার্নের। যারা বোমাগুলো বানায় তাদের বিভিন্ন সময় অভিযানে গ্রেফতার করা হলেও নতুন করে আবার মেলে একই প্যাটার্নের বোমার খোঁজ। এ ঘটনায় তদন্তে নামে সিটিটিসি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ এই ফোরকান ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সঙ্গে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোনো জায়গায় আক্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। আমিরের নির্দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসব হামলায় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন ফোরকান।

‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফোরকান পড়ছিলেন রসায়ন বিভাগে। তার সবচেয়ে বড় পরিচিতি ছিল নব্য জেএমবির বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর হিসেবে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে রসায়নে অনার্স সম্পন্ন করেছেন।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হওয়ায় এবং হিজরত করায় মাস্টার্স সম্পন্ন করতে পারেননি ফোরকান। ২০১৬ সালে অনলাইনে ‘হোয়াইট হাউজের মুফতি’ নামে আইডির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নব্য জেএমবির তৎকালীন আমির মুসার হাত ধরে তিনি এই সংগঠনে যোগদান করেন। আমির মুসার সঙ্গে কাজ করার সুবাদে সংগঠনের ওই সময়ের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের নজরে আসে এবং তাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে কাজ করেন।

তিনি বলেন, রসায়নে পারদর্শী হওয়ার কারণে তার মেধা এবং সাহসের জন্য তাকে এই সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রসায়নের ছাত্র হওয়ার সুবাদে তিনি অল্পদিনে গ্রেনেড ও বোমা বানানোর কাজে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং নিত্য নতুন কৌশলে আইইডি প্রস্তুত করেন। এই সংগঠনের যারা বোমা তৈরি করতো তাদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতেন এই ফোরকান।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, গ্রেফতার অপর অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মারুফ একজন দক্ষ বোমা তৈরির কারিগর। সে অনলাইনে ফোরকানের কাছ থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে সে। সাইফুল ইসলাম মারুফ এবং গ্রেফতার রুম্মান হোসেন ফাহাদ সংগঠনের সিদ্ধান্তে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার লক্ষ্যে বান্দরবান এলাকায় হিজরত করে। সংগঠনের ফান্ড তৈরির জন্য ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতি করার জন্য টঙ্গী থানার রেলগেট এলাকায় রুম ভাড়া নেয় তারা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.