আ.লীগের পদ হারালেন হেলেনা জাহাঙ্গীর

অবশেষে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আলোচিত ব্যবসায়ী নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে।

আজ রোববার (২৫ জুলাই) বেলা ১২টার কিছু পরে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে এই অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতি বহির্ভূত হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ হতে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।’

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের ভুঁইফোড় একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হয়েছিলেন গত ১৭ জানুয়ারি। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। আবদুল মতিন খসরু মারা গেলে ওই আসনে মনোনয়নের জন্য দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, তারাও উপদেষ্টা পরিষদের পদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে গত মাসেই দফতর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, হেলেনা জাহাঙ্গীরের রাজনীতি নিয়ে দলের ভেতরে অনেকেই প্রশ্ন তুলে আসছিলেন। একেক সময় একেক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ছবি প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তারপরও তাকে উপকমিটির সদস্য করা নিয়ে সমালোচনা করেন কোনো কোনো নেতা। একই সূত্র বলেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে উপকমিটিতে যুক্ত করার জন্য বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী সুপারিশ করেছিলেন। এ জন্যই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকার পরও তাকে সদস্য করা হয়েছিল।

সম্প্রতি ফেসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ছবি পোস্ট করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। কথিত এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়।

সংগঠনটির দাবি, গত দু’তিন বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ এর পোস্টার প্রকাশের পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পুরনো দু’টি ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক ফেসবুক পোস্টে জবাবও দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও অন্যান্যদের সাথে যে ছবিগুলো ভাইরাল হচ্ছে সেটা বিয়েতে এসেছিল তখন তোলা ছবি এবং এই ছবিগুলা আমি নিজেই ফেসবুকে দিয়েছিলাম।’

তার দাবি, আমি একজন প্রকৃত ১০০% ব্যবসায়ী ও সরকারের একজন কমার্শিয়ালি ইমপোর্টেন্ট পার্সন; সেখান থেকে রাজনীতিতে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ছোটবেলা থেকেই। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদেরকে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে যেতে হয়। একটা ছবি মানুষের রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে না।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.