এক যুগ পর বিদেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশের আনন্দ

সমীকরণ বদলে গেছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজগুলো এখন কেবল আর জয়-পরাজয়ে সীমাবদ্ধ নেই। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ সরাসরি খেলতে পয়েন্টের হিসাবের ছক কষে দিয়েছে আইসিসি। দলগুলোকে এখন সেটি অনুসরণ করেই চলতে হচ্ছে। যেখানে প্রতিটি ম্যাচই মহা গুরুত্বপূর্ণ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগের দুটি জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলেও সফরকারী বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য ছিল তিনটি ম্যাচই জেতা। এতে নিজেদের খাতায় যোগ হবে ৩০ পয়েন্ট।

মাঠের পারফরম্যান্সে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করেছে টাইগাররা। আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) হারারেতে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ২৯৯ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ওপেনার তামিম ইকবালের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে তিন ম্যাচ জয়ের কল্যাণে পূর্ণ ৩০ পয়েন্টই নিজেদের নামের পাতায় যোগ করেছে অধিনায়ক তামিমের দল। আর ১২ ম্যাচে ৮ জয়ে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ।

এই জয়ে ‘মিশন হোয়াইটওয়াশ’পূর্ণ করেছে টাইগাররা। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাঠে হারানোর এক যুগ পর আবারও বিদেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব দেখাল তারা।

২৯৯ রানের বড় লক্ষ্য। শুরুটা যেমন ভালো হওয়া চাই, তেমনই দিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। প্রথমে দেখেশুনে খেললেও (৬ ওভারে ২৬ রান) পরে আস্তে আস্তে রানের গতি বাড়িয়েছেন এই যুগল।

ওভারপ্রতি ছয়ের ওপর নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এরই মধ্যে তামিম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৫২তম হাফসেঞ্চুরি, ৪৬ বলে। কিন্তু তামিমের ফিফটি ছোঁয়া ওভারেই উইকেট হারিয়ে বসেন লিটন।

ওয়েসলে মাদভেরে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সাজঘরে ফিরিয়েছেন লিটনকে, তাতে ভাঙে ৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ হন এই ওপেনার। ৩৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করেন ৩২ রান।

তারপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৬৯ রানের আরেকটি জুটি তামিমের। সেই জুটিটি ভেঙেছেন লুক জংউই। জিম্বাবুইয়ান পেসারের স্লোয়ার এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ সাকিব। ৪২ বলে একটি করে চার-ছক্কায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান।

৩৪ ওভার শেষে ২ উইকেটে ২০৪ রান ছিল বাংলাদেশের। ৯৬ বলে দরকার ৯৫। পানি পানের বিরতিতে যাওয়ার সময় সহজ জয়ের পথেই ছিল টাইগাররা।

কিন্তু বিরতির পরই জোড়া আঘাত ডোনাল্ড তিরিপানোর। টানা দুই বলে সেঞ্চুরিয়ান তামিম আর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ে ফেরান ডানহাতি এই পেসার।

৯৭ বলে ৮ চার আর ৩ ছক্কায় ১১২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা তামিম উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হওয়ার পর প্রায় একইভাবে আউট হন মাহমুদউল্লাহ (০)। হ্যাটট্রিক বল খেলতে উইকেটে আসেন সিরিজে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পাওয়া নুরুল হাসান সোহান।

সোহান অবশ্য ওই বলটিতে একটুও নার্ভাস হননি। বরং বাউন্ডারিতে দূর করেন হ্যাটট্রিকের শঙ্কা। চোখ ধাঁধানো কিছু শট খেলে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন এরপরও।

পঞ্চম উইকেটে মিঠুনের সঙ্গে গড়েন ৫৪ বলে ৬৪ রানের জুটি। যাতে মূল অবদান সোহানেরই (৩৯)। মিঠুন খেলেছেন ভীষণ ধীরগতিতে। একের পর এক শট খেলতে গিয়ে মিস করেছেন। একদমই আত্মবিশ্বাসহীন মনে হচ্ছিল তাকে।

শেষ পর্যন্ত নিজেই যেন নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে যান মিঠুন। জিম্বাবুইয়ান স্পিনার মাদভেরেকে বড় শট খেলতে ডাউন দ্য উইকেটে এসেছিলেন, এবারও ঠিকমত ব্যাটে বলে করতে পারেননি। লংঅফে ক্যাচ হয়েছেন চাতারার।

তবে এরপর আর দলকে কোনো বিপদে পড়তে দেননি সোহান-আফিফ। ৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছেড়েছেন তারা। সোহান ৩৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪৫ আর আফিফ হোসেন ধ্রুব ১৭ বলে ৩ চার, এক ছক্কায় ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে ২৯৮ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় জিম্বাবুয়ে। রেগিস চাকাভা ওপেনিংয়ে নেমে ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দিয়েছেন। তারপরও অনেকটা সময় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা।

সেই নিয়ন্ত্রণ ছুটে যায় সিকান্দার রাজা আর রায়ান বার্লের এক জুটিতে। ষষ্ঠ উইকেটে ঝড়ো গতিতে ৮০ বলে ১১২ রান যোগ করেন এই যুগল। যাতে ভর করেই প্রায় তিনশোর কাছাকাছি স্কোর দাঁড় করিয়েছে স্বাগতিকরা।

তবে শেষদিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (৩/৮৭) আর মোস্তাফিজুর রহমানের (৩/৫৭) ঝলকে বেশ কয়েকটি উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। অবশ্য ২ উইকেট গেছে মাহমুদউল্লাহর ঝুলিতে। ১টি করে উইকেট গেছে তাসকিন ও সাকিবের দখলে। তাতেই ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ২৯৮ রানে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.