‘আমার মায়ের হাড্ডিগুলা খুইজ্জা দেন স্যার’

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ১৯ ঘণ্টা পর কারখানার ভেতর থেকে এক এক করে মরদেহ বের করে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৯টি পোড়া মরদেহ বের করা হয়েছে। তবে শ্রমিকদের স্বজনদের দাবি, এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

আজ শুক্রবার (০৯ জুলাই) দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কারখানার ভেতর থেকে মরদেহগুলো একের পর এক বের করে আনেন। এখনও উদ্ধার কাজ চলছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই শ্রমিকদের স্বজনরা করাখানার পাশে অবস্থান করছেন। ২৩ ঘণ্টা পার হওয়ার পর এখন প্রিয়মানুষদের জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে শুধু লাশটা চাইছেন অনেকেই। গতকাল রাত ১২টায় হাসেম ফুড লিমিটেডের পুড়ে যাওয়া কারখানার সামনে ফিরোজা বেগমকে (৩৮) প্রথম দেখা যায়। কারখানার প্রধান ফটকের পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন তিনি। চোখেমুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন হালিমার স্বজনেরা।

আজ শুক্রবার দুপুরে কারখানার সামনে থাকা নিখোঁজ স্বজনদের ভিড়েও ফিরোজাকে আলাদাভাবে চোখে পড়েছে। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় ফিরোজা পথ আগলে দাঁড়িয়েছিলেন ঘটনাস্থলে আসা ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার। কখনো হাত কখনো–বা পা জড়িয়ে ধরেছেন। বারবার চিৎকার করে বলেছেন, ‘ও স্যার, আমার মায়ের হাড্ডিগুলা খুইজ্জা দেন স্যার।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড লিমিটেডের একটি ছয়তলা ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিখোঁজ শ্রমিকদের মধ্যে ফিরোজার কিশোরী মেয়ে তাসলিমা (১৬) একজন। দুপুর ২টায় অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ২১ ঘণ্টা পর হালিমা তাঁর নিখোঁজ মেয়েকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। যেকোনো উপায়ে অন্তত সন্তানের লাশটুকু ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন তিনি।

ফিরোজার জন্ম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায়। বাবা বাচ্চু মিয়া দিনমজুর। সংসারের অভাব ঘোচাতে পাঁচ বছর আগে মাত্র ১১ বছর বয়সে হাসেম ফুডের কারখানাটিতে শ্রমিকের কাজ নেয় তাসলিমা। পাঁচ বছর পর এসে তাসলিমার বেতন দাঁড়িয়েছিল ৫ হাজার ৬০০ টাকা। ফিরোজা নিজেও এই কারখানার শ্রমিক। মেয়ের আগে থেকেই কারখানার দোতলায় টোস্টশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গতকাল আগুন লাগার সময়েও মা–মেয়ে কারখানাটির আলাদা দুটি তলায় কাজ করছিলেন।

আজ দুপুরে সে কথা বলেই বিলাপ করছিলেন ফিরোজা। বিলাপের সুরে তিনি জানান, কারখানায় আগুন লাগার পর জীবন বাঁচাতে কারখানার দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখনই কারখানার চারতলায় আটকেপড়া মেয়ে তাসলিমার কথা মনে পড়ে। ছুটে যেতে চান কারখানার চারতলায়। কিন্তু কারখানার নিচের ফটক বন্ধ পেয়ে হালিমার আর কারখানার ভেতরে যাওয়া হয় না।

তাসলিমার চাচি আমিনা বেগম অভিযোগ করেন, আগুন লাগার সময় কারখানার নিচের ফটকটি বন্ধ ছিল। এ কারণে অনেক শ্রমিকই কারখানাটি থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি।

আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই ভবন থেকে অন্তত ৪৯ শ্রমিকের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট লাশের সংখ্যা ৫২। তবে ভবনটির পাঁচতলা ও ছয়তলার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এ দুটি ফ্লোর ও ভবনের ছাদে উদ্ধার তৎপরতা চালানো যাচ্ছে না। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.