রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি: আগুন লাগার পরেও গেট খোলেনি কর্তৃপক্ষ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ১৯ ঘণ্টা পর কারখানার ভেতর থেকে এক এক করে মরদেহ বের করে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৯টি পোড়া মরদেহ বের করা হয়েছে। মরদেহগুলো ফায়ার সার্ভিসের তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মর্গে।

আজ শুক্রবার (০৯ জুলাই) দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কারখানার ভেতর থেকে মরদেহগুলো একের পর এক বের করে আনেন। এখনও উদ্ধার কাজ চলছে।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতদের বেশিরভাগই শিশু। পরিচয় শনাক্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে আগুনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ও ভেতরে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার না করতে পারায় শ্রমিক ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ করছেন।

কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ছয় তলার কারখানাটির প্রতিটি তলায় একটি করে সেকশন রয়েছে। প্রতিটি সেকশনে একটি করে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট রয়েছে। তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টায় কারাখানটিতে বিস্কুট, চকোলেটসহ নানা রকম খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয়। প্রতি শিফটে শ্রমিক ঢোকার পর সেকশনের কেচি গেট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। শিফট শেষ হওয়ার পর গেট খোলে কর্তৃপক্ষ।

শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, কারখানার নিচে গোডাউনের কার্টনে আগুন লাগার বিষয়টি ওপরে কর্মরত অনেক শ্রমিকই জানতেন না। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে আগুন গোটা বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শ্রমিকরা বাঁচার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। কিন্তু আগুন লাগার পরেও কর্তৃপক্ষ সেকশনে থাকা কেচি গেট খুলছিল না। ফলে অনেক শ্রমিক জীবন বাঁচানোর জন্য বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। এ সময় দুই শ্রমিক মারা যান।

তারা আরও অভিযোগ করেন, কেচি গেট বন্ধ থাকায় প্রথমে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। পরে আগুনের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের চিৎকার চেচামেচিতে কেচি গেট খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক শ্রমিক বের হতে পেরেছিলেন আরও অনেকে ভেতরে আটকা পড়েন।

হৃদয় নামের এক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, আমি চার তলার সেকশনে কাজ করছিলাম। আগুন লাগার পর আমরা ভেতরে থেকে বের হতে পারছিলাম না গেট বন্ধ থাকায়। পরে আগুন বেড়ে গেলে গেট খুলে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আগুন সেকশনে চলে আসায় অনেক লাফ দিয়ে নিচে পড়েন জীবন বাঁচাতে। আবার আগুনের ধোঁয়ার কারণে অনেককে সেকশনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতেও দেখেছি।

মো. রাব্বানী নামে আরেক শ্রমিক গণমাধ্যমকে জানান, যদি সময় মতো কেচি গেট খুলে দেওয়া হতো তাহলে আমরা সবাই বেরিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু কেচি গেট বন্ধ থাকায় আমরা শুরুতে বের হতে পারিনি। পরে গেট খুলে দেওয়া হলেও আমার ধারণা ৩০-৪০ জন শ্রমিক বের হতে পারেননি।

এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা তাদের স্বজনদের খোঁজে পেতে ঘটনাস্থলে ভিড় করেছেন। স্বজনদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.