আর মাত্র ১০ কিলোমিটার বাকি ছিল

লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ জেনেও স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ইসরাইল হোসেন (৫৬)। স্ত্রী থাকেন ৪০ কিলোমিটার দূরের আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নে। এতটুকু পথ পাড়ি দিতে পায়ে হেঁটেই রওনা হন ইসরাইল। কিন্তু ১০ কিলোমিটার পথ বাকি থাকতে সব শেষ!

আজ শুক্রবার (০২ জুলাই) সকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ঘোড়ামারা সেতুর কাছ থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছে ইসরাইলের। পুলিশ বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের কোনো একসময় চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি।

ইসরাইলের লাশ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকে স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের বাবার বাড়ি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচ কমলাপুর গ্রামে। সেখানেই থাকেন তিনি। আর ইসরাইল থাকতেন জীবননগরের উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামে নিজ বাড়িতে। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে বেকার ছিলেন। কয়েক মাস যাবৎ শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সেনেরহুদা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানান, বিভিন্ন নতুন জাতের ফসল উৎপাদনে ইসরাইলের বেশ খ্যাতি ছিল গ্রামে। সুখের সংসার ছিল ইসরাইল-ফেরদৌসী দম্পতির। নিজের চিকিৎসা ও দুই মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করেছেন। কোনো কাজও করতে পারতেন না। যে কারণে স্ত্রী ফেরদৌসী তার বাবার বাড়ি পাঁচ কমলাপুর গ্রামে থাকতেন।

ইসরাইল সেনেরহুদা গ্রামে থাকতেন ভাইদের সঙ্গে। তার ছোট ভাই অহিদুল ইসলাম বলেন, বড় ভাই (ইসরাইল) প্রায়ই পাঁচ কমলাপুর গ্রামে ভাবির সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। মাঝেমধ্যে সেখানে থাকতেনও। ভাই স্বল্প বুদ্ধির পাশাপাশি অনেকটাই একগুঁয়ে ছিলেন। যখন যা মন চাইত তাই করতেন। বৃহস্পতিবার লকডাউন চলাকালেই জানান, ভাবির বাড়িতে দেখা করতে যাবেন। গণপরিবহন বন্ধের বিষয়টি জানানোর পরও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে পায়ে হেঁটেই রওনা দেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পণ্যবাহী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইসরাইলের মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে লাশটি অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার করা হলেও ফেরদৌসী বেগম লাশটি তার স্বামীর বলে শনাক্ত করেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.