ছাপাখানা স্থাপন করে জাল স্ট্যাম্প তৈরি, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

শক্তিশালী সিকিউরিটি সিস্টেম না থাকায় গোপন ছাপাখানায় তৈরি হচ্ছে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প। আসল রেভিনিউ স্ট্যাম্পের মতো হুবহু তৈরি করায় আসল না নকল তা বোঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন। তাছাড়া জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প পরীক্ষা করার মতো সব অফিসে ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমনি নেই কঠোর নজরদারিও। এতে জাল স্ট্যাম্পের সহজ প্রচলন ও ব্যবহারে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ২০ কোটি ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা সমপরিমাণের ১৩ লাখ ৪০ হাজারটি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও এসব তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন- চক্রের মূলহোতা আবু ইউসুফ ওরফে পারভেজ ওরফে রানা, আতিয়ার রহমান সবুজ, নাসির উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম ওরফে সোহেল।

আজ শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবি জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে এ ছাপাখানা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। এসব জাল স্ট্যাম্প ব্যবহারে দুর্নীতি বাড়ছে, একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

অভিযানে ওই ছাপাখানা থেকে ২০ কোটি ২ লাখ ২৪ হাজার টাকার মূল্যের ১৩ লাখ ৪০ হাজার জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ১৯ হাজার ৪৮০টি জাল কোর্ট ফি এবং জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রির নগদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের ১ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ১৮টি চেকের পাতা, ১১৪ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার, ডাকবিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিল ও বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়। ওই ছাপাখানা থেকে আরও বিপুল পরিমাণ কাগজ জব্দ করা হয়, যা দিয়ে অন্তত আরও শত কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প বানানো সম্ভব ছিলো।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতার চক্রের মূলহোতা আবু ইউসুফ ওরফে পারভেজ ওরফে রানা। চক্রটি ২০১৭ সাল থেকে কম্পিউটার ও প্রিন্টার ব্যবহার করে জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে বিক্রি করতো। তবে ২০১৯ সাল থেকে গোপনে ছাপাখানা বসিয়ে বৃহৎ পরিসরে জাল স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করে।

তিনি বলেন, জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুত, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ এ তিন ধাপে এসব জাল স্ট্যাম্প ক্রেতা পর্যায়ে পৌঁছে দিতো। তাদের কারখানা থেকে বরিশাল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার নামে খাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, তারা এসব জাল স্ট্যাম্প দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন শিল্প করাখানা, হাসপাতাল, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমনকি আদালতেও এসব জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হতো। তবে প্রতিষ্ঠানের মূল কর্তা-ব্যক্তিরা হয়তো বিষয়টা জানেও না, যারা এগুলো কেনার দায়িত্বে থাকেন পিয়ন বা ক্লার্ক তারাই কমদামে এগুলো কিনে থাকেন। এটাও এক ধরনের অপরাধ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে তারা এ ছাপাখানা স্থাপন করে জাল স্ট্যাম্পের ব্যবসা শুরু করেন। তাদের প্রেস মেশিটনটি জার্মানির, অনেক দামি। কাগজ দিয়ে হুবহু নকল করে এসব বানানো হতো।

কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প, জাল স্ট্যাম্প তৈরির কাগজ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে চক্রে শুধু চারজনই নয় আরও কেউ জড়িত আছে, এটি অনেক বড় একটি চক্র। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। আশা করছি, আমরা পুরো চেইনটাকে ধরতে সক্ষম হবো, যোগ করেন এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, এসব জাল স্ট্যাম্পে কেউ হয়তো দলিল করছেন, কিন্তু স্ট্যাম্পটাই নকল। এসব ব্যবহারে দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে, সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

জাল ও আসল রেভিনিউ স্ট্যাম্পের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আসল স্ট্যাম্পে জিওভি লেখা স্পষ্ট দেখা যায় যা নকল স্ট্যাম্পে যায় না। আবার জলছাপের কালো রেখা ইউভি মেশিনের নিচে জ্বলজ্বল করবে। নকল স্ট্যাম্পে তা করবে না। এ তথ্য জানা সাধারণ মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই তা জানি না। সাধারণভাবে আসল ও নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প পার্থক্য করা কঠিন। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত ইউভি মেশিন রাখা। আর যারা ব্যবহারকারী তারা রেজিস্টার্ড রিটেইলারদের কাছে থেকে ক্রয় করলে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা নেই।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.