লাইকি-বিগোতে মাসে পাচার শত কোটি টাকা

লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘লাইকি’ ও ‘বিগো লাইভ’র মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশ থেকে প্রতি মাসে শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এসব অ্যাপ দিয়ে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ডায়মন্ডের। এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী লক্ষাধিক বাংলাদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছে। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করছে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।

আজ রোববার (১৩ জুন) দুপুরে মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডি সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ।

বাংলাদেশে অ্যাপ দুটি পরিচালনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতাররা হলেন- মোস্তাফা সাইফ রেজা (২৬), মো. আরিফ হোসেন (২৭), এস এম নাজমুল হক (২৭), আসমা উল হুসনা সেজুতী (২৮) এবং অজ্ঞাত এক বিদেশি নাগরিক। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, প্রাইভেটকার, বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি সাইবার পুলিশের প্রধান ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, গ্রেফতার হওয়া বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভ ও লাইকির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাংলাদেশি নাগরিক মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো-লাইকির বাংলাদেশি অ্যাডমিন।

‘গ্রেফতার হওয়া আরিফ হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। এস এম নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট এবং আসমা উল হুসনা সেজুতি বিগো লাইভের প্রধান অ্যাডমিন। অ্যাডমিনরা মাসে এক লাখ টাকা করে বেতন পেতেন।’

ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ বিগো লাইভ ও লাইকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের বিষয়টি সিআইডির সাইবার পুলিশের নজরে আসে। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধের তথ্য প্রকাশ হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির সাইবার পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগো লাইভ ও লাইকিতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন। বিগো লাইভ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্রডকাস্টার আইডি ও অন্যটি সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিং করে। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে কথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করত, তাদের ডিজিটাল কয়েন সদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। পরবর্তী সময়ে এ ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যম অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত।

সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি। এরকম একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করে ডায়মন্ড কেনেন।

তিনি বলেন, এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী লক্ষাধিক বাংলাদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব অ্যাপস বন্ধের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ সিআইডি নেবে কি-না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাইকি ও বিগো লাইভ অ্যাপস বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা নিয়ন্ত্রণকারীদের এসব বিষয়ে নজরে আনব। এছাড়াও আমরা এসব অ্যাপস সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। যারা অশ্লীল ভিডিও দিচ্ছেন, তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এসব অ্যাপসের অফিস আমাদের দেশে খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের স্বার্থে আপাতত ব্যাংকগুলোর নাম বলছি না। কোনো কোনো ব্যাংক থেকে কত টাকা লেনদেন হয়েছে, তা আমরা তদন্ত করছি।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.