বাজেটে ভ্যাট কমানোর দাবি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের

সব রেস্তোরাঁয় ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শ্রেণি ভিত্তিক ভ্যাট আরোপের দাবি জানিয়েছেন হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা।

সেক্ষেত্রে চার ও পাঁচ তারকা হোটেল-রেস্তোঁরার ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ রেখে বিদেশি খাবার বিক্রেতাদের সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ এবং নিম্ন ও মাঝারী মানের রেস্তোরাঁ এবং স্ট্রিট ফুডের জন্য ভ্যাটের হার সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।

আজ শনিবার (১২ জুন) বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাকক্ষে প্রস্তাবিত বাজেটে পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এ সময় সমিতির সভাপতি ওসমান গনি, উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন, মহাসচিব ইমরান হাসান, যুগ্ম-মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিবসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিন বা ক্যাফেটেরিয়া, শিল্পকারখানার ক্যান্টিন ও হোস্টেলের খাবারের উপরে ভ্যাটের হার সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।

সংগঠনের মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, দেশে বিভিন্ন শ্রেণির হোটেল রেস্তোরাঁ রয়েছে। তাদের ব্যবসায়িক পরিধিও একেক রকম। কিন্তু সার্বিকভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্তিযুক্ত নয়। ভ্যাটের হার বেশি হওয়াতে অনেকে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আর যারা নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছেন, তারা পড়ছেন বিপদে। তাদের খাবারের দাম বেশি হওয়ায়, যারা ভ্যাট দিচ্ছে না তাদের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে এ কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সঠিকহারে ভ্যাট নির্ধারণ করে এ খাত থেকে ২৩’শ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি রেস্তোরাঁগুলোকে একটি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আওতায় নেওয়া এবং শিল্পের মর্যাদার দাবি জানিয়ে বলা হয়, সরকারের ১৩টি সংস্থা রেস্তোরাঁগুলোকে পরিচালনা করছে। ব্যবসা পরিচালনার জন্য এতো সংস্থার সাথে সমন্বয় করতে হয়। লাইসেন্স নিতে হয়। এতে ভোগান্তি ও ব্যাবসা শুরু করতে প্রচুর খরচ হয়। সকল হোটেল রেস্তোরাঁকে একটি সংস্থার আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান বক্তারা।

এছাড়া বলা হয়, হোটেল রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্প মর্যাদা না দেওয়াই কারণে বিদ্যুৎ গ্যাস পানির জন্য অধিক বিল বহন করতে হচ্ছে। যাতে খাবারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ সহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

একই সঙ্গে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা সম্পূরক কর ১০ শতাংশ বাতিল এবং চালুকৃত টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বর্হিঃবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ এবং একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন পূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানানো হয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, বর্তমানে অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিসগুলো স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর ফলে এই হোটেল রেস্তোঁরা খাতকে আরো ঝুঁকিতে ফেলছে। তাদের কারণে এ খাতের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি তারা বড়দের প্রমোশন করছে, ফলে ছোটরা পিছিয়ে পড়ছে।

এদিকে করোনা সংকট মোকাবিলায় হোটেল রেস্তোঁরা খাতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছয় মাসের প্রণোদনা চাওয়া হয়। করোনার সময় অধেক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন জানিয়ে তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রণোদনা প্রদান অথবা জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত কর্মচারীদের করোনাকালীন মাসিক খাদ্য সহায়তা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

সম্প্রতি বিভিন্ন রেস্তোরাঁকে জরিমানার প্রসঙ্গ তুলে সংগঠনের মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, আমরা মোবাইল কোর্টের বিপক্ষে নই। তবে মোবাইল কোর্টের প্রক্রিয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এতে শুধু জরিমানা হচ্ছে, কোনো সমাধান হচ্ছে না। বেশিভাগ ক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে জরিমানা করা হচ্ছে। যা রেস্তোরাঁ মালিকদের ওপর একটি প্রহসন।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে সকল হোটেল রেস্টুরেন্টে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়নি, সেগুলোতে মেশিন স্থাপনের পরে একযোগে তা চালু করতে হবে। অন্যথায় ইসিআর মেশিন এর মত ব্যর্থ হবে এ কার্যক্রমও। ইতোমধ্যে ইএফডি মেশিন স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানে উপর্যুপরী মামলা করা হচ্ছে। যাতে এ মেশিন গ্রহণে সকলের অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে।

ভ্যাট আদায়ে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে বলা হয়, তৃতীয় পক্ষের ভাড়া করা লোকের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। ভ্যাট কর্মকর্তাদের অসৌজন্য ও হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধে সরকার প্রধানের কাছে দাবি জানান হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.