বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ‘লুকায়িত রত্ন’ আছেঃ এইচএসবিসি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যাংক দ্যা হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি বাজার বলে অভিহিত করেছে। ব্যাংকটির মতে, এই বাজারে বিনিয়োকারীদের জন্য রত্ন লুকিয়ে আছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকটির একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেছে ব্যাংকটি।

কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখনো অবমূল্যায়িত (Undervalued)। এর অর্থ এই বাজার বিকাশের অনেক সুযোগ রয়েছে।

খবর সিএনবিসির।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি আকারে ভিয়েতনামের অর্থনীতির চেয়ে বড়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধিশীল। করোনাভাইরাসের সংকট শুরুর আগের বছরে (২০১৯) দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.২ শতাংশ।

এতে বলা হয়, বিদেশী ফান্ড ম্যানেজারদের জন্য বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে রিটার্নের অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে ‘লুকানো রত্ন’ আছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বোচ্চ বাজারমূলধনধারী ৩০ কোম্পানির সূচক ডিএসই৩০ গত ১২ মাসে ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।

এইচএসবিসির মতে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা ৫ বছর আগের ভিয়েতনামের বাজারের পর্যায়ে আছে। ভিয়েতনামের বাজার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের জন্য অতি পছন্দের একটি ফ্রন্টিয়ার মার্কেট (Frontier Market)। ভিয়েতনামের সাথে ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য ভাল অবস্থানে আছে বাংলাদেশের বাজার।

প্রতিবেদনে এইচএসবিসির এশিয়ান অ্যান্ড ফ্রান্টিয়ার মার্কেট স্ট্রাটেজিস্ট দেবেন্দ্র যোশি বলেন, ভিয়েতনামের তুলনায় বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনীতি ও ইক্যুইটি বাজারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কম। এখন পর্যন্ত এই বাজারের উপর ফান্ড ম্যানেজার ও অ্যানালিস্টদের নজর সেভাবে পড়েনি। তাই এখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ ও ‘লুকানো রত্ন’ এর সুযোগ নেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো মনোযোগও নেই।

তবে বাংলাদেশের বাজারের সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের বাজার বেশ ছোট এবং এখানে তারল্যও অনেক কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বাজারে ৩শর কিছু বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এদের মধ্যে ৭টি কোম্পানির বাজারমূলধনের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাজারমূলধনে মূলতঃ ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য। তবে ভোক্তা-পণ্য ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের অংশ ধীরে ধীরে বাড়ছে।

অর্থনৈতিক অবস্থাঃ

এইচএসবিসির দেবেন্দ্র যোশি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভিয়েতনামের অর্থনীতির চেয়ে বড়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেঅর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার বেশি। এই প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন। আর পুঁজিবাজার বিনিয়োগের সেই চাহিদা পূরণ করতে পারে।

তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশটিতে মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ডলার। এতে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে নানা পণ্য ও সেবা কেনার মত সক্ষমতা বাড়ছে তাদের। এটি একটি বড় বাজারে পরিণত করেছে বাংলাদেশকে। এই বিশাল অভ্যন্তরীন চাহিদা দেশটির অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চারে ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০/৪০ বছর ধরে তৈরি পোশাক রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে আছে। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। রপ্তানির বহুমুখীকরণের সম্ভাবনা ও সুযোগ বাড়ছে। অবকাঠামোগত উন্নতির ফলে বিদেশী বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ও জাপানের হোন্ডার মতো বিখ্যাত কোম্পানি এখানে প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। দেশটির কিছু ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ও কনজ্যুমার পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভানার কারণ হিসেবে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় মূল্যের স্থিতিশীলতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক দেশের মুদ্রার তুলনায় টাকার মান স্থিতিশীল আছে।

‘পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ কম থাকা’ টাকার মানের স্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এছাড়া জিডিপির বিপরীতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অনেক কম বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে এক্সটার্নাল ব্যালেন্সশীট অনেক শক্তিশালী বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.