রোজিনার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানালেন রুমিন

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, আমলা ও আমলানির্ভর এই সরকার চরম বেপরোয়া ও বাড়াবাড়ি আচরণ করছে। রিপোর্টে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরায় আমলা ও আমলানির্ভর সরকারের হাতে চরম হেনস্তার শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। আমলাদের বাড়াবাড়ি ও বেপরোয়া আচরণের শিকার হয়েছেন অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক ও খাবার চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা ফরিদ আহমেদ।

আজ রোববার (০৬ জুন) জাতীয় সংসদে চলতি বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এ এমপি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট বলতে চাই, কোনো গণমাধ্যমকে তার রিপোর্ট প্রকাশের জন্য যদি হেনস্তার শিকার হতে হয়, জীবন হুমকির মুখে পড়তে হয়, তখন আর কোনো গণমাধ্যমই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। এমনকি মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চাইতেও ভালো।

এর আগে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ বাড়লেও গত ১০ বছরের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের এডিপি বাস্তবায়ন এ বছরই সবচেয়ে কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাজেটের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। করোনায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ তারা বরাদ্দকৃত অর্থ খরচে অদক্ষতা দেখিয়েছে।

রুমিন ফারহানা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে তবুও বরাদ্দ বাড়ানোর অর্থ যে কী সেটা দেশের মানুষ খুব ভালো জানে। আমরা দেখেছি অকল্পনীয় দামে বালিশ, পর্দা, কাঁটাচামচ কিনতে। এখন দেখা যাচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ২৫০ টাকার বিশেষ সুঁই ২ হাজার ৫০০ টাকায় কেনা হচ্ছে।

‘গত বছরও করোনার মধ্যে বাজেট দেওয়া হয়েছিল কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে আমরা ন্যূনতম বরাদ্দ দেখতে পারিনি। জিডিপির অনুপাতে মাত্র ৯ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। যেটা নিয়ে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীও হতাশা প্রকাশ করেছেন। আজকে আমাদের এমন অবহেলার মাশুল দিতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট ১৫ শতাংশ এবং জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ বাংলাদেশে।’

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও দেশের ৪২টি জেলায় এখনো সরকারি পর্যায়ে কোনো আইসিইউ নেই কেন? চিকিৎসাসেবা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ব্যক্তি খাতের ব্যয় কমার বদলে ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ শতাংশ। ফলে স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়।

বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, এই মহামারির শুরু থেকেই টিকা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা নয়ছয় দেখেছি। সেরাম ইনস্টিটিউটের ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ দেওয়ার কথা থাকলেও এবং সে বাবদ মূল্য পরিশোধ করার পরও টিকা আসে মাত্র ৭০ লাখ পিস। বেক্সিমকো এর মধ্যেই লাভ করে নিয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় চাপের কারণেই সরকার বিকল্প পথে যেতে পারেনি। এটা কে বলেছেন? বলেছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এবং তিনি যখন একথা বলেন সেটা নিয়ে আর সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। টিকা বিক্রি করে এক ক্ষমতাশালী ব্যক্তির লাভের কারণে রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে।

বিরোধীদলীয় এই হুইপ বলেন, আমলাদের বাড়াবাড়ি আমরা সুলতানা সরোবর নামকরণের সময়ই দেখেছিলাম। বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক সেই খবর প্রকাশ করলে শারীরিক নির্যাতনের পর মোবাইল কোর্ট দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। অথচ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট অসাংবিধানিক।

রুমিন ফারহানা বলেন, হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে মহাবিপদে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফরিদ আহমেদ। তিনি চারতলা বাড়ি এবং একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক, এমন তথ্যের ভিত্তিতে ইউএনও ৩৩৩ নম্বরে কল করে অযথা হয়রানি ও সময় নষ্ট করার দায়ে ফরিদ আহমেদকে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোকের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণের নির্দেশ দেন। এটা না করতে পারলে জেলে যেতে হবে, এই ভয়ে তিনি স্ত্রীর অলংকার বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণ করে ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করে খাদ্যসহায়তা করতে বাধ্য হন। এই ঘটনায় এক ইউএনও কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই তাঁকে শাস্তি দেওয়া এবং অতি ক্ষমতাশালী আমলাতন্ত্র এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যাচ্ছেতাই করার জন্য।

তিনি বলেন, ফরিদের একটি ছোট হোসিয়ারি কারখানা ছিল। পৈতৃক চারতলা বাড়িটি ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে ভাগ হওয়ার পর তার ভাগে পড়েছে মাত্র তিনটি কক্ষ। এর মধ্যেই তিনি পরিবার নিয়ে চলছিলেন। কিন্তু করোনার সময় তিনি হোসিয়ারি কারখানাটি আর চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে একটি হোসিয়ারি কারখানায় কর্মচারীর কাজ করতে শুরু করেন তিনি। স্ত্রী, কন্যা আর এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পুত্র নিয়ে তার দিন আর চলছিল না। করোনা তাকে খাদ্যের কষ্টেরই মুখোমুখি করেছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.