রাষ্ট্রপক্ষ চেয়েছিলো রোজিনার জামিন হোক: তথ্যমন্ত্রী

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন হোক রাষ্ট্রপক্ষ সেটি চেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং আইনও মানতে হবে।

রোববার (২৩ মে) দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিএসআরএফ, বিএফইউজে, জাতীয় প্রেসক্লাব, ডিইউজে, ডিআরইউ এবং ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, রোজিনার জামিন হওয়ায় আমিও সন্তোষ প্রকাশ করছি। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের কোনো বিরোধিতা করেনি, অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষ চেয়েছে তার জামিন হোক। আমি আশা করব জামিন হওয়ার পর সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। আপনাদের মনে ক্ষোভ ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছেন। আপনারা আবার আগের মত কাজে ফেরত যাবেন, কাজকর্ম করবেন সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের কাজ করতে হবে, একইসঙ্গে আইনও মানতে হবে।

তিনি বলেন, অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মতো একই আইন ভারত পাকিস্তানসহ আরও ৪০টি দেশে আছে। কমনওয়েলথভুক্ত এবং এর বাইরের অনেক দেশে এমন আইন আছে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এবং আইন মানতে হবে।

আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি নিজে যদি কোনো অফিসে যাই, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিসে গিয়ে আমি যদি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অনুমতি ছাড়া তাদের কোনো গোপনীয় নথি থেকে কোনো কাজগপত্র নেই সেটি নিশ্চয়ই বেআইনি, সেটি অপরাধ। সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। কি ঘটেছিল সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল বলেই তারা মামলা করেছে। আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নেই, তাই প্রথমে থেকেই বিষয়টিকে সেভাবে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। নিরপেক্ষ তদন্ত যেন হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকব। তার সঙ্গে কোনো অন্যায় আচরণ করা হলে সেটিও তদন্তে আসবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে রোজিনাকে নিয়ে কিছু খণ্ডিত ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, সেই বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হলো, এটা খুব দুঃখজনক। আমাদের কাজ করতে হবে, একইসঙ্গে আইনও মানতে হবে। পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আইনি সুরক্ষার চাই। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে যেভাবে সাংবাদিকদের হেনস্তা করা হয়, সেটিও দুঃখজনক। গণমাধ্যম যদি ভীতির মধ্যে থাকে সেখানে গণমাধ্যম স্বাধীন হতে পারে না, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারে না।

বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সরকার একদিকে, সাংবাদিকরা একদিকে, আমলাতন্ত্র একদিকে। এই জায়গায় আপনাদের দায়িত্বে আছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে যেন বিরূপ আচরণ না করা হয়। রোজিনা ইসলামের ঘটনার পর সচিবালয়ে যারা কর্মরত আছেন তাদের সমস্যায় হতে পারে, সেটি সমাধানের জন্য তথ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সভাপতি তপন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ, অর্থ সম্পাদক মাসউদুল হক, ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি রেজওয়ানুল হক রাজা ও সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ প্রমুখ।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.