মনস্তাত্ত্বিক বাধায় হোঁচট খাচ্ছে বাজার!

মূল্যসূচকের ব্যাপক উঠা-নামার মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে পুঁজিবাজারে। আজ রোববার (২৩মে) বেলা পৌনে ১২ টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল নিম্নমুখী। এ সময়ে সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্ট। যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩৪ পয়েন্ট কম।

লেনদেনের ধারা দেখে আশংকা, সপ্তাহের শেষ দিনের মতো নতুন সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস তথা আজও সূচক পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে লেনদেন।

বাজার বিশ্লেষকরা, এই মূহূর্তে এমন পতনের কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছেন না। তাদের মতে, মনস্তাত্ত্বিক কারণে বাজারে এই দর পতন হয়ে থাকতে পারে। কারণ সাম্প্রতিক প্রবণতা বিশ্লেসণ করে দেখা যাচ্ছে, ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি এলেই বাজারে পতন শুরু হয়। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ হয়তো মনে করছেন, বাজার ৬ হাজার পয়েন্টের বাধা অতিক্রম করতে পারবে না। অতীত অভিজ্ঞতার কারণে অনেকে এটাও মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হয়তো বাজারকে ৬ হাজার পয়েন্টের মধ্যে বেঁধে রাখতে চান; যদিও তা একেবারেই ভুল ধারণা। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একাধিকবার বলেছেন, তারা বাজারকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে চান। বাজারে গতিতে হস্তক্ষেপ করার পক্ষপাতী নন তারা। তাই বাজার যদি তার নিজস্ব শক্তিতে ৬ পয়েন্ট পার হয়ে অনেক দূরেও চলে যায়, তাতেও তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা শুধু দেখবেন, বাজারে কোনো অনিয়ম বা কারসাজি হচ্ছে কি-না। অনিয়ম বা কারসাজি ধরা পড়লে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকটি কারণে বাজারের অনেক দূর যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত: সর্বশেষ প্রান্তিকে বেশিরভাগ কোম্পানির পারফরম্যান্স গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ভাল হয়েছে। দ্বিতীয়ত: ব্যাংকগুলো নিয়ে আশংকা ছিল বিনিয়োগকারীদের মনে, সেই আশংকাকে ভুল প্রমাণ করে তারা তাদের পারফরম্যান্স ভাল করতে পেরেছে। বেশির ভাগ ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে ভাল লভ্যাংশ দিয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে গতবছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে। ইপিএস বেড়েছে। তাই অনেক ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ আছে। বাজারমূলধনে যেহেতু ব্যাংকের অংশ সবচেয়ে বেশি, তাই এই খাতের শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সহজেই সূচক অনেক বেড়ে যেতে পারে।

আর কয়েক দিন পরেই আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। এই বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হবে বলেই সবাই আশা করছেন। অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, বাজেটে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। অন্যদিকে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগামী অর্থবছরেও বহাল থাকবে। এগুলো পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।

চতুর্থত: পাশের দেশগুলোর পুঁজিবাজার করনোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দারুণ পারফরম্যান্স করেছে। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক সেনসেক্স গত এক বছরে ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের ২৬ মে এই সূচকের অবস্থান ছিল ৩০ হাজার ৬০৯ পয়েন্ট। আর ২১ মে তা বেড়ে হয় ৫০ হাজার ৫৪০ পয়েন্ট।

বাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মোঃ ছায়েদুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, বাজারে স্বাভাবিক উঠা-নামা থাকতে পারে। কিন্তু বড় দর পতনের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কিন্তু সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি উঠলেই বড় পতন হচ্ছে। এ থেকে মনে হয়, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছু দ্বিধা ও উদ্বেগ আছে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারকে ৬ হাজার পয়েন্টের মধ্যে বেঁধে রাখতে চাইছে, যা একেবারেই ভুল ধারণা। কিন্তু এই ভুল ধারণা থেকে সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক চাপেই বাজারে এই দর পতন হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো ভাল পারফর্ম করেছে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো ভাল লভ্যাংশ দিয়েছে।অনেক ব্যাংকের শেয়ার এখনো যথেষ্ট অবমূল্যায়িত। অন্যদিকে সামনে বাজেটে কিছু ইতিবাচক বিষয় থাকবে বলে জানা গেছে। এমন অবস্থায় বাজারে মূল্যসূচক বৃদ্ধির অনেক সুযোগ আছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কমিশন বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে চায়। তাই মূল্যসূচক নিয়ে তারা ভাবছেন না। নিজস্ব শক্তিতে সূচক বাড়লে কোনো আপত্তি নেই। বাজারে কোনো অনিয়ম বা কারসাজি যাতে না হয়, বিএসইসি মূলত সেদিকে নজর রাখছে। এই বিষয়ে তাদের অবস্থান বরাবরই কঠোর।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.