সিমেন্টের মূল্য আবারও বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা

বৈশ্বিক কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে সিমেন্টের মূল্য আবারও বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্য খুব বেশি বৃদ্ধি না পেলেও জাহাজীকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে প্রতি টন ক্লিংকারের সিএফআর (cost and freight) মূল্য প্রায় ৬০-৬২ ডলার যা কিছুদিন আগেও ছিল ৫৬-৫৭ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়াই এর মূল কারণ। অন্যান্য বছর জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি পেলেও সেটা সাময়িকভাবে হয়ে থাকত। যার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে সিমেন্টের মূল্যের উপর খুব বেশি প্রভাব পড়তো না। কিন্তু এবার গত বছরের অর্থাৎ ২০২০ এর নভেম্বর মাসের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজী খরচ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন আগেও ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনাম থেকে এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতি টন ক্লিংকার পরিবহনে ২০ থেকে ২২ ডলার খরচ হতো যা বর্তমানে ২৬ থেকে ২৮ ডলার পর্যন্ত উঠেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে সিমেন্ট তৈরির যে কয়েকটি মূল কাঁচামাল রয়েছে তার সবগুলোই আমদানি নির্ভর এবং এরমধ্যে ক্লিংকার অন্যতম।

আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজীকরণের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন বা বিসিএমএ। বিসিএমএ’র প্রেসিডেন্ট ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর কবির বলেন, যেকোন কারণে সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তা এই খাতের জন্য ক্ষতি হয়। কারণ বিক্রি কমে আসে। ফলশ্রুতিতে, উৎপাদন সক্ষমতা (capacity utilization) কমে যায় এবং ফিক্সড কস্ট (fixed cost) বেড়ে যায়। যার চূড়ান্ত ফল মুনাফা কমে যাওয়া অথবা লোকসান হওয়া।

তবে বিসিএমএ প্রেসিডেন্ট মনে করেন এদেশের উন্নয়নের স্বার্থে বিশেষ করে মধ্যম আয়ের ক্রেতার স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অতিরিক্ত কর যা এখাতে অব্যাহত রয়েছে তা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসলে এখাতের পণ্য বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাবে। যেমন, দ্বৈত কর সমন্বয় করা এবং আমদানি পর্যায়ে নির্ধারিত শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৫০ টাকায় নির্ধারণ করা। তিনি বলেন, সাধারন ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা সম্ভব হলে পণ্য বিক্রির বৃদ্ধির কারণে রাজস্বের পরিমাণও বেড়ে যাবে।
সিমেন্ট খাত সম্পর্কিত তথ্যঃ
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সিমেন্ট শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫ টির মতো দেশী বিদেশী কোম্পানী সিমেন্ট উৎপাদন করছে। দেশে সিমেন্টের বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৪ কোটি মেঃ টন যার বিপরীতে প্রায় ৮.৪ কোটি মেঃ টন উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এখাতে প্রায় ৪২,০০০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। তাছাড়া, এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে কয়েক লক্ষাধিক নির্মাণ শ্রমিক, কর্মচারি ও কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এখাত থেকে সরকারি কোষাগারে শুল্ক-করের মাধ্যমে জমা করা হয়। দেশে সিমেন্টের সমুদয় চাহিদাই মেটানেরা পাশাপাশি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে। চীনে মাথা পিছু সিমেন্টের ব্যবহার ১৭০০ কেজি, মালয়েশিয়ায় ৮৯০ কেজি, থাইল্যান্ডে ৬২০ কেজি, ভিয়েতনামে ৫১৮ কেজি, পার্শ্ববর্তী ভারতে ৩০৫ কেজি, শ্রীলঙ্কায় ৪১২ কেজি এবং বাংলাদেশে ২১০ কেজি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.