‘দুর্নীতির রিপোর্ট করায় রোজিনা ইসলাম আক্রোশের শিকার’

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং তাকে অপদস্তকারীদের তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে তারা এসব দাবি জানান।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তাকারীদের বিচার এবং তার মুক্তির দাবিতে আজ বিকেলে সাড়ে ৪টায় মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। এতে প্রথম আলোর সাংবাদিক, বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কমীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থী, উন্নয়নকর্মীরা অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

মানববন্ধনের নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগে থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে ভিজেই সহকর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেন। তাদের হাতে ‘বিপন্ন সাংবাদিকতা, কাঁদছে দেশ’, ‘রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই’, ‘স্বাধীন দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম চাই’, ‘সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার ভবিষৎ কী’, ’সাংবাদিকতা অপরাধ নয়’, ‘সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট কালো আইন বাতিল চাই’, ‘বাকস্বাধীনতা সাংবিধানিক অধিকার’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা পোস্টার ছিল।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, রোজিনা ইসলাম দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন। তার সুনাম দেশে ও দেশের বাইরে। সাংবাদিকতার জন্য বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তার সাংবাদিকতার মূল শক্তি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। তিনি অনেক কিছু উম্মোচন করেছেন এবং তার প্রতিবেদন ধরে সরকার সংশোধনমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে।

সাজ্জাদ শরিফ বলেন, করোনার কারণে জনস্বাস্থ্য খাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম–দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে রিপোর্ট করছিলেন। এসব রিপোর্টের কারণে যারা বিক্ষুদ্ধ হয়েছে, তাদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন রোজিনা ইসলাম। তাকে যেভাবে সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে, সেটার কোনো কারণ ছিল না।

রোজিনা ইসলামের বিষয়টি আইনের পথেই মোকাবিলা করা হবে বলে জানান সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, আমরা আদালতের প্রতি আস্থাশীল, যে আমরা ন্যায়বিচার পাব। রোজিনা ইসলাম একজন সাংবাদিক হিসেবে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কোনো অন্যায় করতে যাননি। তার সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে মানুষ উপকৃত হয়েছে, সাংবাদিকতা উপকৃত হয়েছে, দেশ উপকৃত হয়েছে।

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতা পরিপন্থি কী না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ বিভিন্ন যেসব আইন হয়েছে সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংর্ঘষিক। এগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সংকুচিত করেছে।

রোজিনা ইসলামের নামে করা মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবি জানান প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, এটি আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও হতে পারে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও হতে পারে। আজকে রিমান্ডের আবেদন না করলে, আমরা রোজিনার জামিনও পেতে পারতাম। একজন নাগরিক হিসেবে আমরা মনে করি, রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা মামলা। রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই, তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার চাই এবং তাকে অপদস্তকারীদের তদন্ত ও দায়ীদের বিচার।

 

রোজিনা ইসলামকে হেনস্থাকারীরা সারা বিশ্বের সামনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে বলে মনে করেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, যারা রোজিনাকে হেনস্থা করেছে, আটকে রেখেছ, তারা সরকারের ভালো করে নাই। তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে নাই। সারা বিশ্বে পৃথিবীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। সারা বিশ্ব দেখছে, এই দেশটি সাংবাদিক নিপীড়নকারী দেশ এবং গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ করে এমন একটি দেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য এবং সুশাসনের জন্য দরকার।

আনিসুল হক বলেন, সারা বাংলাদেশের সবাই রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাচ্ছেন। জনগণের মনের কথা সরকারের পড়তে পারা উচিত। রোজিনা ইসলামের মুক্তির বিষয়ে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ চাই।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, রোজিনা ইসলামের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে থামাতে পরিকল্পিতভাবে সাজানো নাটক করা হয়েছে। রোজিনা ইসলামের এই ঘটনা সরকার এবং সাংবাদিকদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা কী না সেটি তদন্ত করার দাবি জানান তিনি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.