একসঙ্গে জন্ম, একসঙ্গে মৃত্যু

১৯৯৭ সালের ২৩ এপ্রিল। এ দিনের কথা রেমন্ড রাফায়েলের এখনো মনে আছে। কারণ, এদিনে তার স্ত্রী সোজা জন্ম দিয়েছিলেন যমজ ছেলেসন্তান। রেমন্ড এ দুজনের নাম রেখেছিলেন জোফ্রেড ভার্গিজ গ্রেগরি ও রালফ্রেড।

শৈশব থেকে সব কাজ প্রায় একসঙ্গেই করেন তারা। বড় হয়ে দুজনে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন। পড়াশোনা শেষে দুজনেই চাকরি করেন হায়দারাবাদে। কাকতালীয়ভাবে, দুজনের মৃত্যুও হয়েছে একসঙ্গে। গত সপ্তাহে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জোফ্রেড ও রালফ্রেড মারা গেছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ এপ্রিল একই সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর আসে দুই ভাইয়ের। তাদের করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের পর গত সপ্তাহে এক ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

রাফেল বলেন, ‘আমি জানতাম, যদি আমাদের ছেলেরা সুস্থ হয়, তাহলে তারা একসঙ্গে বাড়ি ফিরবে, আর তা না হলে না। একজনের সঙ্গে যা ঘটতো, অন্যজনের সঙ্গেও সেটাই ঘটতো। তাদের জন্মের পর থেকেই এমন হয়ে আসছিল। জোফ্রেডের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম, রালফ্রেড একা বাড়ি ফিরবে না। তারা এক ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যায়।’

তিনি বলেন, ‘ওরা দুজন আমাদের জন্য অনেক কিছু করার পরিকল্পনা করছিল। তারা আমাদের ভালো রাখতে চেয়েছিল। শিক্ষক হিসেবে আমরা অনেক কষ্ট করেছি ওদের বড় করার জন্য। ওরা তার প্রতিদান দিতে চেয়েছিল।’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর প্রদেশের মিরাটের সেন্ট টমাস স্কুলের শিক্ষক রেমন্ড। তার স্ত্রী সোজাও একই স্কুলের শিক্ষক।

জোফ্রেড ও রালফ্রেডের চিকিৎসা প্রথমে বাসায় রেখেই হচ্ছিল। রেমন্ড বলেন, ‘আমরা অক্সিমিটার কিনেছিলাম। একসময় লক্ষ্য করলাম, তাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০-এ নেমে এল। তখন চিকিৎসক পরামর্শ দিলেন হাসপাতালে নেওয়ার। ১ মে দুজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ তিনি জানান, প্রথম পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ আসার পর দ্বিতীয় পরীক্ষায় (আরটি-পিসিআর) নেগেটিভ আসে।

রেমন্ড বলেন, ‘এরপর চিকিৎসকেরা পরিকল্পনা করছিলেন তাদের কোভিড ওয়ার্ড থেকে সাধারণ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়ার। আমি বলেছিলাম, তাদের আরও দুদিন কোভিড ওয়ার্ডে রেখে অন্য কোথাও নেওয়া হোক। কিন্তু ১৩ মে সবকিছু ভেস্তে যায়।’

রালফ্রেড মৃত্যুর আগে হাসপাতাল থেকে শেষ ফোনকলটি করেছিল তাদের মায়ের কাছে। রেমন্ড জানান, রালফ্রেড তার মাকে বলেছিল, সে সুস্থ হয়ে উঠছে। সে জোফ্রেডের স্বাস্থ্যের খবর জানতে চেয়েছিল। এরপর জোফ্রেড মারা যায়। তিনি বলেন, ‘রালফ্রেডকে বলার জন্য আমরা একটা গল্প বানাই। আমরা তাকে বলি, জোফ্রেডকে দিল্লির হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে বুঝতে পেরেছিল, আমরা তাকে মিথ্যা বলছি। রালফ্রেড তার মাকে বলেছিল, “তোমরা মিথ্যা বলছ।”

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.