‘দমবন্ধ’ ভারতের পাশে দাঁড়াচ্ছে একে একে সব দেশ

করোনায় দিশেহারা ভারত। অক্সিজেন আর চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। করোনায় বিপর্যস্ত ভারতের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। এমনকি চিরশত্রু পাকিস্তানও প্রতিবেশী দেশে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ পাঠাতে চেয়েছে। এরই মধ্যে অক্সিজেনসহ বিভিন্ন মেডিকেলসামগ্রী পাঠিয়েছে সৌদি আরব ও ব্রিটিশ সরকার।

আগে নিজদেশে করোনা ভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে টিকার কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতও ওই মাসের শেষদিকে আগে অনেকটা একইভাবে বিদেশে টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। তবে মার্কিনিরা কাঁচামাল পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ায় হুমকিতে পড়ে ভারতীয়দের টিকা উৎপাদন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দফায় দফায় আবেদন জানায় ভারত। তবে তাতে আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছিল না ওয়াশিংটন।

কিন্তু গত কয়েকদিনে ভারতে বিশ্বরেকর্ড সংক্রমণ আর অক্সিজেন সংকটের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে অবশেষে মন নরম হয়েছে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের।

রোববার (২৫ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইটে বলেছেন, মহামারির প্রথম দিকে আমাদের হাসপাতালগুলো চাপে পড়লে ভারত যেভাবে সহায়তা পাঠিয়েছিল, আমরাও প্রয়োজনের সময়ে তাদের সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এর আগে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ভারতীয় টিকা উৎপাদনকারীদের কাছে জরুরিভাবে কাঁচামাল সরবরাহ করবে। ভারতে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সুরক্ষা উপকরণও পাঠাতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বলেছে, তারা ভারতকে ৪৯৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দেবে। এই যন্ত্রটি বাতাস থেকে অক্সিজেন বের করতে সক্ষম। পাশাপাশি ১২০টি ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর এবং ২০টি ম্যানুয়েল ভেন্টিলেটরও পাঠাবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে, তারা ভারতকে অক্সিজেন সহায়তা দেবে। এছাড়া সৌদি আরব ভারতকে ৮০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন উপহার দিচ্ছে।

ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা ভারতে অক্সিজেন এবং ওষুধ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। কমিশনের প্রধান ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ভারতের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিতে দ্রুত সংস্থানের ব্যবস্থা করছেন তারা।

ভারতের বিপদের সময় পুরোনো শত্রুতা ভুলে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তানও। তারা প্রতিবেশীদের কাছে জরুরি চিকিৎসা উপকরণ পাঠাতে চেয়েছে। পাকিস্তানের ইধি ফাউন্ডেশন ভারতে ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ইন্ডিয়া নিড অক্সিজেন লিখলেই উঠে আসছে ভারতের করোনা মহামারির চরম ভয়বহতা। মহামারির কাছে কতটা অসহায় মানুষ সেটা অনূভব করা যাবে। স্বজন হারানো আর্তনাদে ভারী দিল্লি, মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আকাশ। করোনা মহামারিতে ভেঙে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

অক্সিজন আর চিকিৎসার অভাবে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য করোনা রোগী। হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে বাইরেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন অনেকে। কেউবা আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন ব্যর্থ হয়ে। শ্মশানগুলোতেও জায়গা নেই দাহ করার। তাই অনেক হাসপাতালের বেইজমেন্টেই চলছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।

সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.