লাইভে এসে কাঁদলেন কাউন্সিলর খোরশেদ

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে ব্ল্যাকমেইল করে তাকে বিয়ের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি তার স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে একজন নারীর পক্ষ থেকে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে ফেসবুকে লাইভে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান কাউন্সিলর খোরশেদ। এ সময় পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। লাইভের শেষের দিকে তিনিও কথা বলেন এবং তার স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন রাষ্ট্রের কাছে।

লাইভে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, করোনার শুরু থেকেই আমি আক্রান্তদের সেবা ও দাফন-সৎকার করছি। এক পর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়। তখন সিদ্ধান্ত নিই, অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন তাদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সাপোর্ট দেবো।

এ সময় একটি অনলাইন পত্রিকার সংবাদের নিচে এ নারী মন্তব্য করেন তিনি অক্সিজেন দিতে চান এবং আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। তখন থেকেই তিনি আমার সঙ্গে ফেসবুকে কানেক্টটেড এবং কথা বলা শুরু করেন।

এক পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি, তার মতলব ভিন্ন এবং আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং বোঝাই। তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই। তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছেন, এ রকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হন।

তারপর আমার স্ত্রীকেও বুঝিয়ে বলি, আমার স্ত্রীও বলে যে তিনি আমার সঙ্গে দুষ্টামি করছেন হয়তো। এরপর একবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন ঠিক করে গাড়ি ও কাজী নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। পরে আমার স্ত্রী ও লোকজন তাকে আটকায়। তিনি আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ সবার কাছে গেছেন। তবে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ, সবাই তার কৌশল বুঝতে পেরে তাকে অবজ্ঞা করেছেন।

তিনি বলেন, সম্মানকে ভয় পাই বলেই এতোদিন মুখ খুলিনি। আমি ধৈর্য ধরেছি, কারণ আল্লাহ হয়তো একটি ফয়সালা করবেন। তবে দুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে এ সংক্রান্ত নিউজ হওয়ায় আমি নিজেই বিষয়টি সবার কাছে বলতে এসেছি। আমার পাশে থাকার জন্য আমি সাংবাদিক, আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও প্রতিপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।

এ করোনা যোদ্ধা আরও বলেন, ২১ জানুয়ারির পর থেকে হোয়াটস অ্যাপে, ম্যাসেঞ্জারে, টেলিফোনে আমাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আমার পরিবারের সবাইকে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার করছেন। সর্বশেষ আমার স্ত্রী ও সন্তান নকিবকে তুলে নিয়ে হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন। আমি এসব ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি সংশ্লিষ্ট সকল দফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

এক পর্যায়ে ওই নারী ছড়িয়ে দেন, ধানমন্ডির এক বুটিকস ব্যবসায়ী নারীকে আমি বিয়ে করেছি এবং দুই বউ নিয়ে গ্যাড়াকলে আছি। এ ধরনের কোন ঘটনা সত্য নয় এবং স্থানীয় দুটি পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয় যা দুঃখজনক।

এসব বলতে গিয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, সাইদা শিউলি নামে এই নারী এক ভয়ঙ্কর চরিত্রের অধিকারী। তার সঙ্গে প্রশাসন ও উচ্চ মহলের বিভিন্ন দফতরের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের চলাফেরা রয়েছে। তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং তিনবার বিয়ে করেছেন। এই নারীর দুই সন্তান রয়েছে যারা ভার্সিটিতে পড়ে এবং এক মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে।

খোরশেদ বলেন, এতোদিন সহ্য করেছি, আর পারছি না। অনেকে লজ্জায় আমার কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনাদের কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। সাংবাদিক ভাইরা লেখনি ও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে আমাকে এ অবস্থা থেকে বাঁচান। আমি এ নির্যাতন থেকে উদ্ধার হতে ও মুক্তি চাই। আমি আমার পরিবারের কাছেও ক্ষমা চাই এসব ঘটনার।

তিনি বলেন, সম্মান তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। আমার সে সম্মান নষ্ট করে দিচ্ছে পরিকল্পনা করে। আমি বাসা বাড়িতে সময় না দিয়ে আপনাদের সেবায় দিনরাত পার করছি এবং নিজের একটি অবস্থান করছি। কেন আমার সুনাম নষ্ট করে আমার ক্ষতি করতে চাইছে এর কারণ উদঘাটন করে আমাকে মুক্তি দিন।

তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা বলেন, হঠাৎ একদিন ওই নারী বাড়ির নিচে কাজী নিয়ে হাজির হন। পরে আমরা তাকে ধরলে তিনি বলেন, আমার বড় ভাই খোরশেদ। দুই ঘণ্টা পর বলেন, একদিন পরে আপনাকে বলবো সব। পরের দিন আমাকে বলেন, আমি খোরশেদকে ভালোবাসি। আমি তাকে চাই। আপনি অনুমতি দেন। আমি সংসার বুঝি না, সংসার আপনার সঙ্গে করবে আর আমার সঙ্গে শুধু ফোনে কথা বলবে আর আমাকে সময় দেবে। উনার এ ধরনের কথায় আমার মনে হয়েছে, উনি সুস্থ না। পরে তাকে আমি তার পথ দেখতে বলি।

এ সময় তিনি আমাকে টাকা পয়সা অফার করেন এবং যা প্রয়োজন দেবেন বলে জানান। আমি বলি, যদি আপনি আমাদের উপকার করতে চান তাহলে খোরশেদকে ছেড়ে চলে যান। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে হুমকি দেন এবং আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করবেন বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, এরপর আমাদের ওয়ার্ডের সচিবকে ফোন দিয়ে বলেছেন, আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করবেন। আমার সঙ্গে তার সব কথার রেকর্ড আছে। সাংবাদিকসহ যে কেউ চাইলে আমরা এসব রেকর্ডিং দেব। আমি রাষ্ট্রের কাছে আমার স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তা চাই।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.