লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে

করোনাভাইরাস অতিমারি মোকাবেলায় চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ এর মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার। সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যায় উর্ধগতির কারণে পরিস্থিতি নিয়ে সরকার বেশ উদ্বিগ্ন। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে এক সপ্তাহের লকডাউন তেমন কার্যকর নয়। কারণ করোনা ভাইরাসের ইনকিউবিশন পিরিয়ড (দেহে ভাইরাস প্রবেশের পর লক্ষণ প্রকাশের সময়) প্রায় ১৪ দিন। তাই লকডাউনের সুফল পেতে হলে এর মেয়াদ হতে হবে তিন সপ্তাহ। নিদেন পক্ষে দুই সপ্তাহ না হলে ওই লকডাউন দেওয়া আর না দেওয়া একই কথা।

গত কয়েকদিন ধরে পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় নতুন রোগী কম শনাক্ত হলেও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেশ উদ্বেগজনক। এই হার ২০ থেকে ২৩ এর মধ্যে উঠা নামা করছে। অন্যদিকে আজ নিয়ে টানা দুদিন করোনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে লকডাউন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এ বিষয়ে আগামী সোমবার একটি সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই লকডাউনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। সেখানে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ শনিবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ এখনো বেশি বলে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। কয়েক দফায় বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। একপর্যায়ে করোনার সংক্রমণ কমেও গিয়েছিল।

দেশে করোনা পরিস্থিতি যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছিল তখন গত মার্চ মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে নতুন সংক্রমণ। এমন পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। বর্তমানে লকডাউনে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

কিন্তু এরই মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ নতুন রোগী শনাক্ত ও সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আভাস নেই। বরং বরং ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের আগের দুদিনে যেভাবে মানুষ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ঢাকা ছেড়েছে, তাতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সংক্রমণের বড় উল্লম্ফনের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো বেশ জরুরি হয়েছে।

তবে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোট উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবী মানুষ লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। অনেক দরিদ্র মানুষকে লকডাউনের কারণে প্রায় অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে খবর আসছে। দেশে দুটি বড় উৎসব গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে। এর একটি হচ্ছে-বাংলা নববর্ষ, অন্যটি ঈদ-উল-ফিতর। লকডাউনের কারণে পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক বাণিজ্য পুরোটা-ই মার খেয়েছে। এখন ঈদের বাজারও যদি ব্যাহত হয় তাহলে সেটি শুধু দোকানদার, ব্যবসায়ী নয়-সামগ্রিক অর্থনীতিতেকও প্রভাবিত করবে। তাই সব দিক ভেবেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.