কেমন হবে ৭ দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’

দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ কমিয়ে আনতে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দিচ্ছে সরকার। এ সময় বন্ধ থাকছে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস। তবে খোলা থাকছে শিল্প-কারখানা। সর্বসাধারণকে এ সময় সতর্ক থাকতে হবে, ঘরের বাইরে আসা যাবে না। শুধু জরুরি সেবা চালু থাকবে। বন্ধ থাকবে যান চলাচল।

রোববার (১১ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহন ও ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে চালু থাকবে শিল্প-কারখানা।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আপাতত এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।’ কবে প্রজ্ঞাপন জারি হবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সোমবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

এর আগে রোববার বিকেল ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গতকাল রোববার (১১ এপ্রিল)। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন। মাঝের দুদিন অর্থাৎ ১২ ও ১৩ এপ্রিল তাহলে কী হবে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতা চলবে ১২ ও ১৩ এপ্রিলও।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন হবে, এ সময় আমাদের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি সেবা ছাড়া সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে হবে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ সরকার সময়মতো প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৪ এপ্রিল থেকে সাধারণ ছুটির ঘোষণা আসছে। আপাতত এক সপ্তাহের জন্য হলেও এটি কার্যকর করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা আছে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে, যেটি হবে কমপ্লিট (পূর্ণাঙ্গ) লকডাউন। এই লকডাউনের সময় বাড়ানো হবে কি না তা নিয়ে ২০ তারিখে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের কাছে মেসেজ হলো- সতর্ক থাকতে হবে, বাইরে আসা যাবে না। এটি অত্যন্ত কঠিন লকডাউন হবে। অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে, বাইরে আসা যাবে না। শুধু জরুরি সেবা চালু থাকবে। সব যানবাহনও বন্ধ থাকবে।

তবে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কঠোর লকডাউন আরোপ করে সার্বিক অর্থনীতির চাকাকে কিভাবে সচল রাখা হবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হলে অনেকের চাকরিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের দায়-দেনা ও কিস্তি পরিশোধের চাপও রয়েছে। কঠোর লকডাউনের ফলে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় মোটাদাগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে-একেবারে ভিক্ষুক থেকে সমাজের উচ্চবিত্ত শিল্পপতিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

এছাড়াও সামনে আসছে ঈদ। এ জন্য সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধের বড় চাপ অপেক্ষা করছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি এখনো উদ্যোক্তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি; এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়ে গেছে। ফলে সবকিছু তছনছ হতে চলেছে। এবারের ধাক্কার প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে এবং সরকার উদ্যোক্তাদের পাশে সময়মতো না দাঁড়ালে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের পথে বসার উপক্রম হবে, এমনই আশঙ্কা অনেকের।

লকডাউনের প্রভাবে মানুষের আয় কমবে, ফলে ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। এতে উদ্যোক্তারা যেসব পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করছেন বা করবেন, সেগুলো বিক্রি করা সম্ভব হবে না। গত বছর লকডাউনে যারা বেকার হয়েছেন তাদের অনেকে এখনো চাকরি ফিরে পাননি। বিকল্প কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়া অনেকের জন্য কঠিন ও বিব্রতকর। ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের আয় কমে গেছে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সেভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না। সবকিছু বিবেচনায় লকডাউন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছেই।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.