‘সমাজের সকলের উন্নতি হলেই দেশের উন্নতি হবে’

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, ট্রাক্সের অনেক দিক আছে। সরকারের রাজস্ব বাড়লে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে। আর রাজস্ব না থাকলে এসব করা সম্ভব হয় না। অর্থনীতি সম্প্রসার না হলে অনেক কিছুই সম্ভব না।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে আয়োজিত ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা: অর্থবছর ২০২১-২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠান এ কথা বলেন তিনি।

আজ শনিবার (১০ এপ্রিল) সকালে অনলাইনে (জুম এর মাধ্যমে) ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। যা ওয়েবিনারে ভিডিও আকারে তুলে ধরা হয়।

ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, শুল্ককর গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সংবাদমাধ্যমগুলোতে শুধু দুই বছরের তুলনা দেখানো হয়। কিন্তু সরকারের করণীয় কি তা আলোচনা করা হয় না। এটা অনুচিত। আমাদের কি করণীয় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা, গবেষণার দরকার আছে।

তিনি বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধি হলে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় সরকার। আবার রাজস্ব কমে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ওই কাজগুলো ঠিকভাবে করা যায় না। সরকার স্কুল-কলেজে অনুদানসহ নানান ধরনের সহায়তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

‘আমাদের যেসব জিনিস রয়েছে তাকে আরো শক্ত করার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক সময় যেসব খাতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে অনেকে সে খাতে বিনিয়োগ করেন এটা ঠিক না। অন্যান্য খাতগুলোর দিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার।’

ড. মসিউর রহমান আরও বলেন, শুল্ককরের হার স্থিথিশীল রাখার জন্য যদি চেষ্টা করা হয় তাহলে ৫ম বছরে যে বিনিয়োগ করলেন, সাত বছরের প্রকল্পে তিনি পেলেন মাত্র দুই বছর। অনেক সময় তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেয়াতের সময়টা বাড়ানো যায় না। এ ক্ষেত্রে সাত বছরের শুরুর দিকে যারা বিনিয়োগ করেন তাদের বেশি সুবিধা বা আয় পাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়।

সরকারের ব্যয়ের একটি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। সরকারের যথাযথ স্বচ্ছতা না থাকলে যারা ট্রাক্স দেন তাদের মনে নানান প্রশ্ন আসবে। সরকার কোন খাতে কিভাবে অর্থ ব্যয় করে তা জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং মানুষ এসব বিষয়ের খরচ কিভাবে নেয় তা বিবেচনা করা, যোগ করেন ড. মসিউর।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। এতে প্রধান ৪টি খাতের উপর সরকারি ও বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত প্রদান করেন। এগুলো হলো: ট্যাক্সেশন ও ভ্যাট, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য এবং অবকাঠামো (জ্বালানি, লজিস্টিক ও স্বাস্থ্য)।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান ওয়েবিনারের সভাপতিত্ব করেন।

এ সময় বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ২০২১, ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এবারের বাজেটটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনার মতো মহামারির সাথে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সময়ের বাজেটটি দেশের জন্য খুব শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। আমাদের ভ্যাট এবং ট্রাক্স নিয়ে নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কর্পোরেট ট্রাক্স সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করা দরকার। সরকারের ভিশন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পরিকল্পনার সাথে বাজেটের সমন্বয় থাকা দরকার।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশে যাওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা দেখছি তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতকে জোর দিতে হবে। আমাদের পহেলা বৈশাখ, রমজান ও ঈদের যে ব্যবসাগুলো হয় আমাদের ব্যবসায়ীরা গত বছর তা করতে পারেননি। এবারো তা হয়নি। আমাদের এই খাত রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দরকার। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ৮০-৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান আছে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ১০ শতাংশ মজুরি কমে গেছে। এক্ষেত্রে সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক নীতি ও আইসিটি বিভাগের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা করোনাকালীন খুব ভালোভাবে বাজেট পর্যালোচনা করতে পারিনি। এবারো তাই। আমরা যতোটা পারছি ভার্চুয়ালি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাজেটে আইটি সেক্টর, রফতানি বহুমূখীকরণসহ অন্যান্য কি কি ব্যাপারে আরো উন্নতি করা যায় তা আমরা বাজেট পর্যালোচনায় নজর রাখবো। এছাড়া ড্রেজারের শুল্কমুক্ত করার বিষয়টি লক্ষ্য রাখছি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, আমরা ভ্যাট আইন শুরুর পর থেকে ব্যবসায়ীদের সহায়তা পেয়েছি। আমাদের রেজিস্টার ভ্যাট দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় একলাখের বেশি রিটার্ন পাচ্ছি। ২০২১ সালের পর আশা করি কেউ আর ভ্যাট অফলাইনে রিটার্ন দিবেন না। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।

এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের সহায়তায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। করোনাকালে সরকারের জনগণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হচ্ছে। যার জোগান দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আমরা করদাতাদেরও লাভবান করার বিষয়টি নজরে রেখেছি। ট্রাক্স রেট ক্রমান্বয়ে কমানোর চেষ্টা করছি। আমরা এ বিষয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।

ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আবিদ হোসেন খান, মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান, এএসএম মাইনুদ্দিন মোনায়েম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তামিম, আবুল কাশেম খান, ড. হোসেইন জিল্লুর রহমান প্রমুখ।

অর্থসূচক/আরএ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.