করোনার পর এক-তৃতীয়াংশ মস্তিষ্কের রোগে ভোগেন: ল্যানসেট

করোনা থেকে সুস্থ হয়েও মানসিক বা স্নায়বিক সমস্যায় ভুগতে হয়েছে অনেককেই। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা লোকজনের এক তৃতীয়াংশ এ ধরনের সমস্যায় পড়েছেন।

মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) ‘দ্য ল্যানসেট সাইকিয়াট্রি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, করোনায় সংক্রমিত তিনজনের মধ্যে একজনের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য বা স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ রয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, করোনা ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা ৩৪ শতাংশ ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে স্নায়বিক বা মানসিক সমস্যা ধরা পড়ছে।

গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ভোগেন দুশ্চিন্তায়। ১৭ শতাংশের মধ্যে এ সমস্যা দেখা যায়। ১৪ শতাংশের মধ্যে দেখা যায় মেজাজের ওঠানামার সমস্যা।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে স্নায়বিক সমস্যা বেশি তীব্র দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নিউরোলজিক্যাল সমস্যা প্রকট।

যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রের ৫ লাখের বেশি রোগীর মেডিকেল তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই রোগীদের ক্ষেত্রে তারা কয়েকটি সমস্যা দেখতে পেয়েছেন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, স্ট্রোক, পার্কিনসন, স্মৃতিভ্রংশ, গুলেন-বারি সিন্ড্রোম, সাইকোসিস, মুড ডিজঅর্ডার এবং উত্তেজনা।

সমস্যাগুলো মূলত পর্যবেক্ষণমূলক সিদ্ধান্ত। তাই এর জন্য কোভিড-১৯ কে সরাসরি দায়ী করতে পারছেন না গবেষকেরা।
কিন্তু অন্য ফ্লুতে আক্রান্তদের সঙ্গে তুলনা করে এটা বোঝা যায় যে, কোভিড-১৯ রোগীদের সমস্যাগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২ শতাংশের স্ট্রোক হয়েছে। যারা আবার আইসিইউতে গেছেন তাদের মধ্যে সাত শতাংশের স্ট্রোক হয়েছে।

এতে বলা হয়, ভাইরাসটি ব্রেনে প্রবেশ করতে পারে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানে প্রত্যক্ষ ক্ষতির কারণও হতে পারে এটি। এর পাশাপাশি রক্ত জমাট বাঁধার মতো অপ্রত্যক্ষ প্রভাবও দেখা দিতে পারে।

গবেষণাটির সহলেখক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোচিকিৎসার ফেলো ম্যাক্সিম টাকুয়েট বলেন, আমাদের গবেষণার ফলাফল এই ইঙ্গিত দেয় যে ফ্লু বা অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের চেয়ে করোনার পর মস্তিষ্কের রোগ ও মানসিক সমস্যা বেশি দেখা যায়।

সংক্রমণের ছয় মাস পার হওয়ার পর আক্রান্তের ক্ষেত্রে কী ঘটে, তা এখন দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেন ম্যাক্সিম।

গবেষকেরা বলছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কীভাবে সহায়তা করা যেতে পারে, তার ক্ষেত্রে এ গবেষণা ভূমিকা রাখবে।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.