মিয়ানমারে এবার সেদ্ধ ডিমে প্রতিবাদ

ইস্টার সানডের উদযাপনকে প্রতিবাদের রঙে সাজিয়েছেন মিয়ানমারের সেনাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। ইস্টার উৎসবের ডিমের গায়ে সেনাশাসন অবসানের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা হয়েছে। সেসব ডিম নিয়ে রোববার রাস্তায় বিক্ষোভ করেন হাজারো গণতন্ত্রপন্থী। তারা গেরিলা কায়দায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন। এ দিন বিক্ষোভে জান্তার পক্ষে চীনের তৎপরতার নিন্দা করা হয়।

রোববারের (০৪ এপ্রিল) আন্দোলন বলেই এটিকে ‘ইস্টার এগ’ নাম দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা আলাদা আলাদা দায়িত্ব নিয়ে সেদ্ধ ডিমগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রতিবাদী বক্তব্য কিংবা বার্তা দিয়ে ডিমগুলোকে রঙিন করে সাজিয়েছেন। এরপর রেখে এসেছেন প্রতিবেশীদের দ্বারে দ্বারে। কোনো কোনো প্রতিবেশীর বাড়ির সামনের গেটে ঝুলিয়ে রেখেছেন ব্যাগে ভরা বর্ণিল বাহারি ডিমগুলো।

‘আমাদের লোকদের বাঁচান’, ‘গণতন্ত্র বাঁচান’, ‘আমরা অবশ্যই জয়ী হব’, ‘বসন্ত বিপ্লব’, ‘বিদায় নাও সেনাপ্রধান’ জাতীয় লেখা ছিল ওই ডিমগুলোতে। আবার কোথাও মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি’র ছবি কিংবা তিন আঙুলের স্যালুট এঁকে দেওয়া হয়েছে। মোমবাতি প্রজ্বালনের পর এ প্রতিবাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ইয়াঙ্গুনের একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এএফপিকে জানান, আমি বৌদ্ধ ভিক্ষু, কিন্তু এ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হয়ে গৌরববোধ করছি। আমি প্রায় ১ ঘণ্টা সময় নিয়ে ডিমগুলোকে সাজিয়েছি। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হোক, গণতন্ত্র ফিরে আসুক-আমি এই প্রার্থনা করছি।

ডিম প্রতিবাদের প্রচারাভিযানে একটি ফেসবুক গ্রুপ লিখেছে- ‘ইস্টার সানডের মতো খ্রিস্টান ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ মিয়ানমারের একজন ঊর্ধ্বতন ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস বো টুইটারে জানিয়েছেন, ‘যিশু জেগে উঠেছেন: হাল্লেলুজা-মিয়ানমারও জেগে উঠবে।’ মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র-মানবাধিকারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউয়ের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সামরিক শাসনবিরোধী প্রায় দুই মাসের বিক্ষোভে নিহত সংখ্যা রোববার পর্যন্ত ৫৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে। অধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ অবস্থায় দেশটিতে সেনা শাসনের অবসান দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ক্রমেই বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠছে। এরইমধ্যে দেশটির ১১টি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

বিক্ষোভকারীরা দিনে যেমন রাস্তায় নামছেন, তেমনি রাতেও তারা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। নিহতদের সম্মান জানাতে রাতে মোমবাতি ও মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছেন তারা।

সূত্র: রয়টার্স।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.