এজেন্ট ব্যাংকিং: এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে ৪৩ শতাংশ

গ্রাহকের দোরগোড়ায় আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়তই জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। তাই গত এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে ৪৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। শুধু তাই নয়, এই সময়ের মধ্যে আমানতের স্থিতি বেড়েছে আট হাজার ৬১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকরা শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল-সর্বত্রই ব্যাংকিং সুবিধা নিতে পারছেন বিধায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, তথ্য-প্রযুক্তির যুগে খুব সহজে ব্যাংকিং সেবা নিতে মরিয়া গ্রাহকরা। গ্রাহক সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে। এজেন্টের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সহজ হচ্ছে। গ্রাহকরা শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল-সর্বত্রই ব্যাংকিং সুবিধা নিতে পারছেন। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকরা সন্তোষ প্রকাশ করছেন। তাই দিনকে দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় গ্রাহক হিসাব খুলেছেন এক কোটি ৭৪ হাজার ১১০ জন। এসব হিসাবে জমাকৃত অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৪১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রাহক ছিল ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৭ জন এবং আমানত স্থিতি ছিল সাত হাজার ৭২৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে ৪৩ দশমিক ০৭ শতাংশ বা ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩ জন। আর আমানতের স্থিতি বেড়েছে আট হাজার ৬১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থাৎ ৫২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ গ্রহণ, অভ্যন্তরীণ অর্থ স্থানান্তর, সঞ্চয়, সামাজিক সেবা প্রদানসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদানও করা যাচ্ছে। এতেও গ্রাহকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে মত দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছরে বেড়েছে ৬০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

আলোচ্য সময়ে নতুন এজেন্ট বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর আউটলেট বেড়েছে ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করার জন্য ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়া প্রথমে সেবাটি চালু করে। কোন ধরনের বাড়তি চার্জ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, মহানগর ও সিটি করপোরেশন ছাড়া যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই, এমন পৌর ও শহর অঞ্চলেও এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া যায়। তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে জনগণকে ব্যয়সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হয়। এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বর্তমানে চেক দিয়ে নগদ টাকা উত্তোলন ছাড়া যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম করা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার পেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী অর্থসূচককে বলেন, বর্তমানে আমাদের ৩৮ লাখ এজেন্ট গ্রাহক রয়েছে। করোনাকালীন গত এক বছরেই এজেন্ট গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংক এশিয়ার চার হাজার ২০০ এজেন্ট রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এজেন্টে ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রাহকরা খুব সহজেই এজেন্টের মাধ্যমে তাদের আর্থিক লেনদেন করতে পারেন। এরজন্য তার সময় ও শ্রম দুটোই কম লাগে। তাছাড়া করোনার সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকরা শহরে ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে তাদের আশেপাশের এজেন্টদের থেকে আর্থিক লেনদেন করতে পারতেন। তাই এই সময়ে তাদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এজেন্ট ব্যাংকিং।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক এশিয়া এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের ৫০০ কোটি ঋণ সুবিধা দিয়েছে উল্লেখ করে আরফান আলী বলেন, আমরা পুরো দেশ জুড়েই এজেন্টের মাধ্যমে ক্ষুদ্র খাতে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রাথমিকভাবে এই ঋণ ফেরত পেতে কিছুটা অসুবিধা হলেও তা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বৈদেশিক অর্থ গ্রহণ, অভ্যন্তরীণ অর্থ স্থানান্তর, সঞ্চয়, সামাজিক সেবা প্রদানসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদানসহ নানামুখী সেবা যুক্ত হলে ভবিষ্যতে গ্রাহকরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রতি আরও নির্ভরশীল হবে। এর জনপ্রিয়তাও আরও বাড়বে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.