মালি ও সেনেগালে পণ্য রফতানি করবে ওয়ালটন

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি ও সেনেগালে মিলবে বাংলাদেশে তৈরি ওয়ালটনের ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল এবং আইসিটি পণ্য। এজন্য মালির বিখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিম্পারা গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশি সুপারব্র্যান্ড ওয়ালটন। সিম্পারা গ্রুপের মালি ও সেনেগালে বিস্তৃত ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে তৈরি ওয়ালটন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য পুরো আফ্রিকা মহাদেশে রফতানি আরও গতি পাবে। ওয়ালটনের গবেষণায়, আফ্রিকাকে খুবই সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সিম্পারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামাদৌ ডিট এন’ফা সিম্পারা এবং ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের (আইবিইউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

এ চুক্তির ফলে ওয়ালটনের সব ধরনের পণ্য নিতে পারবে সিম্পারা গ্রুপ। মালি ও সেনেগালে ওয়ালটনের অথোরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করবে তারা। জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি মালিতে পণ্য রফতানি শুরু করবে ওয়ালটন। প্রথম শিপমেন্টে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, ইলেকট্রনিক অ্যাপ্লায়েন্সেস, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ও কম্প্রেসর ইত্যাদি পণ্য যাবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডিরেক্টর নিশাত তাসনিম শুচি, ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক এস এম জাহিদ হাসান, রেফ্রিজারেটর বিভাগের সিইও আনিসুর রহমান মল্লিক, মোবাইল ফোন বিভাগের সিইও এস এম রেজওয়ান আলম, আইবিইউ’র সিনিয়র ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর রকিবুল ইসলাম এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সাব্বির হাসান খান প্রমুখ।

এর আগে রোববার (২১ মাচর্, ২০২১) স্থলবেষ্টিত দেশ মালির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ি মামাদৌ ডিট এন’ফা সিম্পারা গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করেন। সে সময় তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে ওয়ালটনের বিশ্বমানের রেফ্রিজারেটর উৎপাদন প্রক্রিয়া, মেটাল কাস্টিং, কম্প্রেসর, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন, এসএমটি প্রোডাকশন, পিসিবি, কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল ফোন এবং হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন প্রক্রিয়া সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডিরেক্টরস এস এম মাহবুবুল আলম ও জাকিয়া সুলতানা এবং ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি।

তখন আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন এসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর রহমান, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইউসুফ আলী, কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স সিইও মাহফুজুর রহমান এবং পিএস টু ডিরেক্টর রেজাউল ইসলাম।

মামাদৌ ডিট এন’ফা সিম্পারা বলেন, ওয়ালটন সম্পূর্ণ টেকনোলজি বেজড একটি ভার্সাটাইল প্রতিষ্ঠান। কারখানার আকর্ষণীয় স্থাপনা এবং বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশে আসার আগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়ালটন সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছি। সরাসারি ওয়ালটন ফ্যাক্টরি দেখে এবং এর অগ্রগতি স্বচক্ষে দেখে সত্যিই আশ্চর্য হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পণ্য রফতানির মাধ্যমে সারাবিশ্বে সুনাম অর্জন করছে ওয়ালটন। তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পেরে আমরা খুবই খুশি। আফ্রিকায় সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের চাহিদা খুব বেশি। এই পণ্য আফ্রিকার বাজার গ্রহণ করতে উন্মুখ হয়ে আছে। ওয়ালটনের পণ্য আফ্রিকার বাজারে ছড়িয়ে দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো। আমার বিশ্বাস শুধু মালিই নয়, ওয়ালটন পণ্য এক সময় পুরো আফ্রিকা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। আফ্রিকার ঘরে ঘরে শোভা পাবে মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন পণ্য।

নিশাত তাসনিম শুচি বলেন, বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে পণ্য রফতানি করছে ওয়ালটন। করোনার মধ্যেও গত বছর ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি পণ্য রফতানি হয়েছে। রফতানি কার্যক্রম আরও বেগবান করতে ব্যাপকভাবে কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে মালির সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকার পাশাপাশি আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে ওয়ালটন পণ্য রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস খুব দ্রুতই ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য দেশের অন্যতম রফতানি খাত হবে। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড হবে ওয়ালটন।

এডওয়ার্ড কিম বলেন, এই মুহুর্তে আফ্রিকায় অনেকগুলো উদীয়মান অর্থনীতির দেশ রয়েছে। তাই পুরো আফ্রিকা ঘিরে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে আমাদের অ্যাগ্রেসিভ রফতানি পরিকল্পনা রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা ত্বরান্বিত হবে। বৈশ্বিক অংশীদারদের সর্বোচ্চ গুণগতমানের পণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি ওইএম (অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানফ্যাকচারার) এর মাধ্যমে বিজনেস ভলিউম বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে ওয়ালটন। পণ্য তৈরিতে লেটেস্ট প্রযুক্তির ব্যবহার, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড, আকর্ষণীয় ডিজাইন ও কালার নির্বাচনের কারণে বিশ্ব ইলেকট্রনিক্স বাজারে দ্রুত গ্রাহকপ্রিয়তা পেয়েছে ওয়ালটন। নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে ওয়ালটন পণ্যের উচ্চ গুণগত দিক। এভাবে ধাপে ধাপে বিশ্বেও শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডে পরিণত হতে যাচ্ছে ওয়ালটন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.