বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৮০% কার্যকর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের যুক্তরাষ্ট্র, চিলি এবং পেরুতে চালানো বৃহৎ পরিসরের ট্রায়ালে এই ভাইরাসের লক্ষণজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধে ৮০ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। আর গুরুতর অসুস্থতা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঠেকাতে শতভাগ কার্যকর। একই সঙ্গে টিকাটি প্রয়োগে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে টিকার তৃতীয় পর্যায়ে (চূড়ান্ত পর্যায়ে) পরীক্ষা শেষে আজ সোমবার (২২ মার্চ) এ তথ্য জানানো হলো।
সব বয়সী ৩২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে এই ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার এই ফল যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিনটির অনুমোদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথ তৈরি করতে পারে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে বড় বিতর্ক শুরু হয় চলতি মাসের প্রথম দিকে। এই টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির ভয়ে বেশ কিছু দেশ ওই টিকাদান স্থগিত রাখে। তবে টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে গত সপ্তাহে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটি নিরাপদ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দ্য ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি।

বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের মানবদেহে পরীক্ষায় ৩২ হাজার ৪৪৯ জন অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি এবং প্রায় ৬০ শতাংশের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কোভিড–১৯–এর জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তারা ডায়াবেটিস, অত্যধিক স্থূলতা, হৃদ্‌জনিত রোগে আক্রান্ত। টিকাটি সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ মোকাবিলায় ৭৯ শতাংশ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থতা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকাতে এই টিকা ১০০ শতাংশ কার্যকর।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের সঙ্গে যৌথভাবে ওই পরীক্ষা চালায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের মেডিসিনের অধ্যাপক ও টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষার উপপ্রধান অ্যান ফ্যালসি বলেছেন, আগের পরীক্ষাগুলো পাওয়া ফলাফলকেই সমর্থন করছে এ পরীক্ষা। ৬৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতা দারুণ ফল পাওয়া গেছে, যা খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক। ফলে অতি প্রয়োজনীয় টিকা হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এই পরীক্ষা। একই সঙ্গে বয়স্ক লোকদের আশ্বস্ত করছে যে ভাইরাস থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ককে সুরক্ষা দিতে পারে টিকাটি।

বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা আরও বলেছে, মানবদেহে টিকার পরীক্ষার তথ্য পর্যবেক্ষণের নিরপেক্ষ বোর্ড এক ডোজ করে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের (২১ হাজার ৫৮৩ জন) শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি।

উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মেলায় গত ২৭ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি মহামারি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.