পরমাণু চুক্তি নিয়ে খামেনির হুঁশিয়ারি

পদক্ষেপটা আগে আমেরিকাকে নিতে হবে। ট্রাম্পের আমলে ইরানের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করতে হবে। তাহলেই ইরান পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে পারে বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি।

ফার্সি নববর্ষ ১৪০০ সালের সূচনা তথা নওরোজ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটা বড় অপরাধ করেছিলেন। ট্রাম্প ভুল পথ নিয়েছিলেন। এর ফলে তার দেশেরই বদনাম হয়েছে। ওদের উপরই এখন সব চেয়ে বেশি চাপ তৈরি হয়েছে। যদি আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন একই পথে চলে, তা হলে সেই নীতিও ব্যর্থ হবে।

দেশটির সর্বোচ্চ নেতা নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ’ উল্লেখ করে বলেন, যে দেশটি পরমাণু বোমা হামলা চালিয়ে একটি দেশের দুই লাখ ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করতে পারে সে দেশের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ অপ্রত্যাশিত নয়। তবে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমাদের যুবসমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন এবং অনেক পণ্য দেশেই তৈরি করে ইরানকে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য ছিল একটি মূল্যবান শিক্ষা। নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদের দু’টি করণীয় রয়েছে। প্রথমত, আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপকারীর কাছে গিয়ে অনুরোধ করতে পারি যে, আপনারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন। তখন সে আমাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী দাবি-দাওয়া চাপিয়ে দেবে। এই পথটি অপমানজনক ও অবমাননাকর।

দ্বিতীয় পথ হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে সব অর্থনৈতিক প্রয়োজন দেশের ভেতরেই মেটানোর চেষ্টা করা। ইরানি জনগণ দ্বিতীয় পথ বেছে নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে- করোনা ভাইরাসের কথা উল্লেখ করা যায়। এই ভাইরাস ইরানে ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মাস্ক পর্যন্ত ছিল না। অথচ এখন আমরা নিজেরা করোনাভাইরাস মোকাবিলার সব পণ্য দেশেই তৈরি করছি। করোনা ভাইরাসের টিকা দেশেই তৈরি হয়েছে এবং জনগণ সে টিকা নিচ্ছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় আমাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে এবং অবমাননাকর পথ বেছে নেয়া যাবে না।

পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই নেতা বলেন, আমেরিকার ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি’ ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সে চেয়েছিল ইরান অবমাননাকরভাবে তার কাছে নতিস্বীকার করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরান নতিস্বীকার করেনি বরং সেই ব্যক্তি চরম অপমানিত অবস্থায় বিদায় নিয়েছে। বিদায় নেয়ার আগে সে আমেরিকারও বদনাম করেছে। অন্যদিকে ইরান গৌরবের সঙ্গে টিকে রয়েছে।

আয়াতুল্লাহিল উজমা বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টও যদি তার পূর্বসুরির পথ অনুসরণ করে তবে সেও একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু ইরান গর্বভরে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানসহ একাধিক দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকেও বেরিয়ে আসে। ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর তেহরানও সিদ্ধান্ত নেয়, ২০১৫-র পরমাণু চুক্তি মানা হবে না। তারাও সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম মজুত করেছে বলে অভিযোগ।

২০১৫ সালের চুক্তিতে আমেরিকা ও ইরান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীনও সই করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল- ইরান তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। কিন্তু তারা এখন সাড়ে চার শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার পর তারা ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম পরিশোধন করা হবে বলে জানিয়েছে। .

এদিকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আবার এই চুক্তিতে ফিরতে চান। তবে প্রশ্ন হলো এই ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ কে নেবে?

আইএইএ-র ডিরেক্টর জেনারেল দুই দেশের সঙ্গেই কথা বলছেন। তিনি এই মাসের শুরুতে বলেছিলেন, আমেরিকা এই চুক্তিতে ফিরতে পারে। অনেকগুলো বিষয় এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তবে এটুকুই বলতে পারি, এই চুক্তি বজায় রাখা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

এছাড়া খামেনি জানিয়েছেন, ইরান সরকার কোনো তাড়াহুড়ো করবে না। নিষেধাজ্ঞার ফলে স্থানীয় স্তরে জিনিসগুলো তৈরি হচ্ছে। আমরা যে ঘোষণা করেছি, তা যদি আমেরিকা মেনে নেয়, তা হলে সব সমস্যা মিটবে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো খুবই সন্দিগ্ধ। তারা মনে করে, ইরান আসলে পরমাণু বোমা তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু ইরানের দাবি, তাদের পরমাণু প্রকল্প শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই। সূত্র: পার্সটুডে, এএফপি, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.