বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ না বাড়ানো সংক্রান্ত একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে নানা গুজব আর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে পুঁজিবাজারে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল (১৪ মার্চ) তালিকাভুক্ত সব বিদ্যুৎ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায়, যার রেশ আজও অনেকটা রয়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আলোচিত সংবাদের ভুল অর্থ করার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের শেয়ার নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
এদিকে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী একাধিক কোম্পানি জানিয়েছে, সরকারের আলোচিত সিদ্ধান্তের কারণে তারা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বরং তাদের বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ আরও বেড়ে যেতে পারে।
উল্লেখ, গত বৃহস্পতিবার জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের মধ্যে সরকার প্রাকৃতিক গ্যাসচালিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেবে।
বৈঠক শেষে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, বড় বড় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসতে থাকায় এখন আর ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরকার নেই। তাই প্রয়োজন বিবেচনা করে এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।
ওই খবরকে ঘিরে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। মন্ত্রণালয় যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কোম্পানির সাথে তার কোনো মিল নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আইপিপি (ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) পরিচালনা করছে, যেগুলোর মেয়াদ কমপক্ষে ১৫ বছর। অন্যদিকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মেয়াদ ৫ থেকে ৭ বছর।
খবরের ভুল ব্যাখ্যার প্রভাবে আজ বিদ্যুত উৎপাদনকারী কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এর মধ্যে বারাকা পাওয়ারের শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ, ডোরিন পাওয়ারের ১ দশমিক ৩ শতাংশ, এনার্জিপ্যাকের ২ দশমিক ২ শতাংশ, জিবিবি পাওয়ারের ১ দশমিক ৪ শতাংশ, শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানির ১ দশমিক ৫ শতাংশ সামিট পাওয়ারের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ইউনাইটেড পাওয়ারের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
অথচ বেশিরভাগ কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে আইপিপি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বারাকা গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) মনিরুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কয়েকটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। মন্ত্রণালয় রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বন্ধের কথা বলেছে, আইপিপি বন্ধের কথা বলেনি। আইপিপিগুলোর উৎপাদনক্ষমতা ও দক্ষতা অনেক বেশি। অন্যদিকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের চেয়ে কম দামে সরকারকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। তাই এগুলো বন্ধের কথা ভাবছে না সরকার। বরং রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বন্ধ হয়ে গেলে আইপিপিগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, তাদের বারাকা পাওয়ার এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বারাকা পতেঙ্গা আইপিপি পরিচালনা করছে।
শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানির লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোঃ ইয়াছিন আহমেদ অর্থসূচককে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় জড়িত থাকায় অনেকে খবরটির ভুল অর্থ করেছেন। বাস্তবে মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া) কার্যকর হলে তাদের কোম্পানির উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি কোনো রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করছে না। শাহজীবাজার পাওয়ার নিজে সরাসরি একটি আইপিপি পরিচালনা করছে, যার মেয়াদ আছে আরও ৩ বছর। কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড পাওয়ারের মেয়াদ আছে ৭ বছর এবং অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড পাওয়ার ইস্ট লিমিটেডের মেয়াদ আছে ১২ বছর। অন্যদিকে কোম্পানির সবচেয়ে ইউনিক সহযোগী কোম্পানি পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড একটি মেয়াদহীন (Perpetual) কোম্পানি। জ্বালানী তেল পরিশোধন ও উৎপাদনকারী (অকটেন, পেট্রোল) এই কোম্পানির ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো মেয়াদ বেঁধে দেওয়া নেই। এই কোম্পানি যতদিন পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করবে ততদিন তা বিক্রি করার সুযোগ আছে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.