সরকার খুবই দুর্বল: ফখরুল

বর্তমান সরকার খুবই দুর্বল মন্তব্য করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও বলেন তিনি। সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বুধবার (১০ মার্চ) বিকেলে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন তো আজ্ঞাবহ ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ। সরকারকে কিছু বলতে হয় না, তার আগে বলে দেয়- খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব জয়লাভ করেছে।’

‘এই নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। আজকে এই জনসভা থেকে আমরা ঘোষণা করতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নতুন করে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠন করতে হবে।’

একই সঙ্গে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কি ভোট দিতে পারি? এই যে আমাদের ছয় জন মেয়র প্রার্থী এখানে বসে আছেন তারা কেউ ভোট করতে পারেননি। তাদের ভোটের দিন সবাইকে বের করে দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে এবং সন্ধ্যা বেলা তাদের পছন্দমত ফলাফল ঘোষণা করেছে।’

‘এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নয়, সেই ২০১৮ সালের আগে থেকে ২০১৪ সালে যে নির্বাচন সেই নির্বাচনেও আরেকটি নির্বাচন কমিশন তারাও ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছে। আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেইনি। আবার ২০১৮ সালে কৌশল পরিবর্তন করে আগের রাত্রে ভোট ডাকাতি করে নিয়েছে। লজ্জা হয় চিফ ইলেকশন কমিশনার যখন বলেন যে, ভোট সুন্দর হয়েছে, সুষ্ঠু হয়েছে। অথচ তারই একজন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব তিনি খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ করার, ভোট পরিচালনা করবার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্য নয়।’

নির্বাচনের প্রতিবাদে জানাতে বিভিন্ন মহানগরী সমাবেশ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কেন এত ভয়? জনগণের যে কথা বলার অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেন? জনগণের ভোট দেয়ার যে অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেন?’

‘কারণ আমরা জানি জনগণ যদি ভোট দেয়, ভোট দিতে পারে তাহলে আপনারা কোনোদিনই আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার খুব দুর্বল সরকার। এত দুর্বল যে তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করতে হয়। এই যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এই যে আপনারা মোবাইলে কথা বলেন, ফেসবুক খোলেন- এগুলো ওরা নিয়ন্ত্রণ করে, মনিটর করে। কে, কোথায় কী বলে-না বলে ওইগুলো দেখে।’

‘তারা যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরাইল থেকে। যে দেশের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। যেটা আবার আল-জাজিরা টেলিভিশন আবার সেটা প্রচার করে দিয়েছে। কী ভয়াবহ প্রচার। সেই প্রচারে আমরা বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমাদের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট চিফ জাস্টিস বললেন, লেখালেখি করা ভালো কিন্তু রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়-এটা আমরা মেনে নেব না।’

‘আমার প্রশ্ন হলো অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে হবে যে, কোন কাজে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। লেখালেখি করলে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। সেজন্য মুশতাক আহমেদকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর সেজন্য কার্টুনিস্ট কিশোরের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়, তার মাথার মধ্যে রক্তপাত হয়। সেখানে ইমেজ নষ্ট হয় না রাষ্ট্রের? আমরা যখন দেখি প্রায় ৭শ লেখক তারা লেখালেখি করার জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকা পড়ে আছেন তখন রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয় না।’

‘আমরা যখন দেখি যে, আমেরিকাতে ১০ জন সিনেটর তারা সিনেটে চিঠি দিচ্ছে বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, বাংলাদেশে বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড হয়, বাংলাদেশে বিনা বিচারে মানুষকে আটক রাখা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় চরমভাবে তখন ইমেজ নষ্ট হয় না। যখন সাত সাতটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দেয়-বাংলাদেশে মানুষের মানবাধিকার নেই, লঙ্ঘিত হচ্ছে অন্যায়ভাবে এখানে হয়রানি-নিপীড়ন করা হচ্ছে তখন ইমেজ নষ্ট হয় না।’

৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে কাদের অবদান ছিলো তার সঠিক ইতিহাস জানাতেই বিএনপি স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, শুধুমাত্র একজনের জন্য, শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীর জন্য, শুধুমাত্র একটি পরিবারের জন্য, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এদেশে স্বাধীনতা আসে নাই। বছরের পর বছর ধরে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের পরিশ্রম, যে আত্মত্যাগ, আমাদের নেতাদের যে আত্মত্যাগ সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে।’

‘সেই স্বাধীনতাকে কী করেছো তোমরা? সেই স্বাধীনতাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ। আমি জানি না আমি কী করে স্বাধীন বলবো। আমি বলতে পারি না, আমার সেই অধিকার নেই, আমি কথা বলতে পারি না। আমার লেখার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে। লিখলে জেলে দিচ্ছে, জেল থেকে জামিন পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে আমার ন্যায্য হিস্যা রয়েছে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সেই হিস্যাও চাইতে পারবো না।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকালে সীমান্ত হত্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে এই সরকারের এতো দুর্বলতা কেন? কেন সে নিজের নাগরিকের কথা বলতে ভয় পায়। কেন কানেকটিভি ওরা চায়? আমরা চাই যে, কানেকটিভি হোক। বাণিজ্য বাড়ুক, প্রসার ঘটুক। কিন্তু আমি কিছুই পাবো না। আমি পোর্ট দিয়ে দেবো, আমার এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে দেবো, আমার রাস্তা ব্যবহার করতে দেবো কিন্ত বিনিময়ে আমি ফেনী নদী, তিস্তা নদীর পানিরও হিস্যা পাবো না। এটা হতে পারে না।’

সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান ফখরুল।

ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনে সড়কে দুটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে ‘সারাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে’র দাবিতে এই সমাবেশ হয়।

ঢাকা উত্তর বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো মোহাম্মদপুরের শহীদ পার্কে। পুলিশ আপত্তি জানালে সমাবেশের স্থল পরিবর্তন করে খিলগাঁওয়ে আনা হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সভাপতিত্ব ও মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু এবং এএফএম আব্দুল আলিম নকির পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের বরিশালের মজিবুর রহমান সারোয়ার, খুলনার নজরুল ইসলাম মনজু, চট্টগ্রামের ডা. সাহাদাত হোসেন, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস,আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহানগর দক্ষিনের কাজী আবুল বাশার, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.