রমনা পার্কের সৌন্দর্যবর্ধন: আড়াই বছরে অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ

রাজধানীর ‘ফুসফুস’ খ্যাত রমনা পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনে প্রায় আড়াই বছর আগে প্রকল্প শুরু করেছিলো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ২ বছর ৫ মাস পরেও প্রকল্পের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা চলমান কাজের জন্য চলতি বছর সময় চাইবে বলে সূত্রে জানা গেছে।

নথি ঘেঁটে জানা গেছে, প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। পরে ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে ১১ মাসে প্রকল্পের কাজ হয় ১১ শতাংশ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সে সময় এমন ‘অগ্রগতি’র তথ্য উঠে আসে। ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত প্রকল্পটি শেষ করার তাগিদ দেয় সংসদীয় কমিটি।

সংসদীয় কমিটির তাগিদের পর ৫ মাস দশদিনে কাজ হয়েছে ২৯ শতাংশ। ২০২১ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত সব মিলিয়ে কাজ হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা অর্থসূচককে জানান, ৪৮ কোটি টাকার কাজ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পে ১২ থেকে ১৪ কোটি টাকা কম লাগতে পারে। আর চলমান প্রকল্পটি শেষ করার জন্য ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, খননসহ বেশ কিছু অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে বেঞ্চ ও শিশু কর্নার আধুনিকায়নের কাজ। পাশাপাশি চলছে বাতি সংযুক্তের কার্যক্রমও। এরইমধ্যে বাতিগুলোর নকশা করে তার টানা হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় রমনা পার্কে থাকা চারটি টয়লেট সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি সিরামিক ইটের রাস্তা বানানো হবে লেকের পাশ দিয়ে। নির্মাণ করা হবে কাঠের বেঞ্চ। এছাড়া লেক খনন করে এর গভীরতা বাড়ানো হবে। আধুনিকায়ন করা হবে শিশু কর্নার। উদ্যানের চারপাশে এবং ভেতরে বসানো হবে প্রায় দুই হাজার বাতি। পার্কের ভেতরের সড়কগুলো সিরামিক ইট দিয়ে সংস্কার, মৎস্য ভবনের গেইট দিয়ে ঢুকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পেছনের গেইট পর্যন্ত সড়কটি পিচ দিয়ে সংস্কার করা হবে।

এছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পেছনে উদ্যানের নার্সারিটি নতুন করে সাজসজ্জা, ময়লা ফেলার জন্য উদ্যানের ভেতরের রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো নতুন করে স্থাপন করা ও রমনার এক পাশে শরীরচর্চা কেন্দ্র করার কথা রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের বিভিন্ন অংশের কাজ চলছে কয়েকটি ভাগে। খনন কাজ চলছে পুরোদমে। পাশাপাশি চলছিলো লেকের পাড়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ।

প্রকল্পটি দেখভাল করেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। শামসুল ইসলাম নামের একজন জানান, দিনে গড়ে ৫০-১০০ জন শ্রমিক কাজ করেন এই প্রকল্পে। প্রয়োজনে শ্রমিক সংখ্যা বাড়ানো-কমানো হয়। চুক্তি ভিত্তিক বেশিরভাগ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, করোনালীন প্রায় ছয়মাস বন্ধ রাখার পর ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় রমনাপার্ক। গণপূর্ত অধিদফতরের নগর গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সোহানুর রহমান সে সময় গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত থেকে মৌখিকভাবে পার্কটি খোলার জন্য বলা হলে তারা পার্কটি খুলে দেন।

এর আগে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর জনসাধরণের হাঁটার জন্য রাজধানীর রমনা পার্ক খুলে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ।

উল্লেখ্য, ১৬১০ সালে মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো রমনা পার্ক বা রমনা উদ্যান। প্রতিষ্ঠাকালে এটির আকার বর্তমানের চেয়ে বেশ বড় ছিলো। মোঘলরাই এর নামকরণ করে ‘রমনা’। এখন প্রতিবছর এই পার্কে বাংলা বছরের শুরুতে হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রমনা পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের পরের সরকারগুলো উদ্যানটির অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম হাতে নেয়নি। এরশাদ আমলে শুধু লেকের খনন কাজ করা হয়। এবারই প্রথম উদ্যানের পুরাতন স্থাপনা ভেঙে সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে।

অর্থসূচক/আরএ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.