করোনার কারণে ১ কোটি মেয়ে শিশু বিয়ের ঝুঁকিতে: ইউনিসেফ

করোনা মহামারির কারণে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে মেয়ে শিশুরা। এই দশক শেষ হওয়ার আগেই অতিরিক্ত এক কোটি শিশুর বিয়ে সম্পন্ন হতে পারে, যা বাল্যবিয়ে কমাতে সাম্প্রতিক অনেক বছরের অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

আজ সোমবার (০৮ মার্চ) জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) প্রকাশিত এক নতুন বিশ্লেষণে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

‘কোভিড-১৯: শিশুবিয়ের বিরুদ্ধে অগ্রগতির জন্য হুমকি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকা, অর্থনৈতিক চাপ, সেবা বিঘ্নিত হওয়া, গর্ভাবস্থা এবং বাবা-মায়ের মৃত্যুজনিত ঘটনা সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা মেয়েদের বাল্যবিয়ের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ইউনিসেফ বলছে, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগেও ১০ কোটি মেয়ে চলতি দশকে বাল্যবিয়ের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি দেশে এটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।

গত দশ বছরে বিশ্বব্যাপী শিশু হিসেবে বিয়ে হয়ে যাওয়া তরুণীদের অনুপাত ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল, বা প্রতি চারজনের মধ্যে প্রায় একজন থেকে কমে প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজনে পরিণত হয়েছিল, যা প্রায় আড়াই কোটি শিশুবিয়ে প্রতিরোধের সমতুল্য। আর এই অর্জন এখন হুমকির মুখে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে শিশুবিয়ের ব্যাপকতা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। লাখ লাখ মেয়েশিশু যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে তা আরও জটিল করে তুলেছে কোভিড-১৯। স্কুল বন্ধ থাকা, বন্ধুবান্ধব এবং সহায়তা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য মেয়েদের শিশুবিয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা যদি জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তাহলে মেয়ে শিশুরা যা যা হারাবে (তাদের শিক্ষা, তাদের স্বাস্থ্য ও তাদের ভবিষ্যত) তা তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, শৈশবে যেসব মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তারা তাৎক্ষণিক এবং জীবনভর এর পরিণতি ভোগ করে। তাদের ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হওয়া আশঙ্কা বেশি থাকে এবং স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কম। বাল্যবিয়ে অল্প বয়সে এবং অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার ঝুঁকি বাড়ায় এবং ফলস্বরূপ প্রসূতির স্বাস্থ্যগত জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। বাল্যবিয়ে মেয়েদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে এবং তাদের নিজ কমিউনিটিতে অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মেয়েদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। মহামারি-সম্পর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং শারীরিক দূরত্বের কারণে মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক পরিষেবা ও কমিউনিটি সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যেসব সেবা ও সহায়তা তাদের বাল্যবিয়ে, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভবস্থা ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত রাখে। স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং পুনরায় পড়াশোনা শুরু না করার সম্ভাবনাই বেশি। কাজ হারানো এবং বর্ধিত অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে আর্থিক ভার লাঘব করতে পরিবারগুলোকে তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে বাধ্য করে তুলতে পারে।

বিশ্বব্যাপী বর্তমানে জীবিত প্রায় ৬৫ কোটি মেয়ে ও নারীর বিয়ে হয়েছিল তাদের শৈশবে, যার প্রায় অর্ধেকই ঘটেছে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, ভারত ও নাইজেরিয়ায়। কোভিড-১৯ এর প্রভাবগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের সমাপ্তি ঘটাতে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ত্বরান্বিত করতে হবে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.