সৌদি যুবরাজকে কেন ছাড় দিচ্ছে আমেরিকা?

কিছু দিন আগেই সৌদি রাজা সালমানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। সেখানে মানবাধিকারের বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন বাইডেন। নাম না করে উল্লেখ করেছিলেন সাংবাদিক খাশোগি হত্যার প্রসঙ্গ। তারপরেই আমেরিকা একটি গোপন গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ করে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, খাশোগির হত্যার সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের যোগ আছে। অনেকেই মনে করেছিলেন, ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে আমেরিকা সৌদির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বাস্তবে আমেরিকা তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ছিলেন জামাল খাশোগি। ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে তাকে হত্যা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে শেষ তাকে দূতাবাসে ঢুকতে দেখা যায়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে, তাকে যারা হত্যা করেছিল, তারা সৌদির বিশেষ ফোর্সের সদস্য। একমাত্র যুবরাজের কাছেই তারা জবাবদিহি করে। খাশোগিকে বহুদিন ধরেই নজরে রেখেছিল সৌদি। এবং শেষ পর্যন্ত যুবরাজের নির্দেশেই তাকে হত্যা করা হয় বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সৌদি আরব তা মানতে রাজি নয়।

সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেয় আমেরিকা। কিন্তু সৌদির ক্ষেত্রে ততটা কড়া মনোভাব নেয়নি বাইডেন প্রশাসন। মূলত তিনটি বিষয় বলা হয়েছে। এক, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দুই, সৌদির সম্পর্ক আরো উন্নত করতে হবে। এবং তিন, ভবিষ্যতের সম্পর্ক আরো মজবুত করার জন্য দুই দেশকেই আগ্রহ দেখাতে হবে।

গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরে বাইডেন জানিয়েছিলেন, সোমবার পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানানো হবে। সোমবার মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, ৭৬ জন সৌদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমেরিকায় ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র জানায়নি।

এছাড়া কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রথম প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তার বদলে প্রতিবেদনটির আরেকটি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। প্রথম প্রকাশ করা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দুষ্কর্মে সহযোগী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ ছিল, নতুন সংস্করণে তেমন তিনজন ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের নতুন সংস্করণে তিন ব্যক্তির নাম গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।

হুট করে গোয়েন্দা প্রতিবেদন বদল ও বদল করা প্রতিবেদনে তিন ব্যক্তির নাম মুছে দেওয়ার বিষয়টিকে ‘রহস্যজনক’ বলছে সিএনএন। যে তিন ব্যক্তির নাম গায়েব করে দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম জন হলেন- আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আল-হোয়ারিনি। খাশোগি হত্যায় আগে তার নাম আসেনি। তিনি সৌদি আরবের একজন ক্ষমতাধর মন্ত্রীর ভাই বলে জানা গেছে। অপর দুজন হলেন ইয়াসির খালিদ আলসালেম ও ইব্রাহিম আল-সালিম। তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

তিনজনের নাম মূল প্রতিবেদনে কেন ছিল, আর তাদের ভূমিকা কী ছিল এবং সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দপ্তর কোনো ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দপ্তরের এক মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, আমরা ওয়েবসাইটে একটি সংশোধিত নথি দিয়েছি। কারণ, প্রথম প্রতিবেদনটিতে ভুল করে তিনটি নাম রয়ে গিয়েছিল। এই নামগুলো প্রতিবেদনে থাকা উচিত হয়নি। সূত্র: রয়টার্স, এপি, এএফপি

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.