‘মৃত্যু হলে কাকপক্ষীও জানতে পারবে না’

সম্প্রতি সিরিয়া নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। সিরিয়া নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করেছিল তারা। তাদের রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা ভয়াবহ। অভিযোগ, হাজার হাজার সিরিয়ার মানুষকে জেলে হত্যা করা হয়েছে। সরকারপক্ষ এবং বিরোধী গোষ্ঠী, সকলেই নির্বিচারে এই হত্যালীলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, দশ-এগারো বছরের শিশুদের উপর চরম অত্যাচার চালানো হয়েছে। একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে ওই বয়সের শিশুদের।

২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। আসাদ সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের লড়াই চলাকালীনই সেখানে আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠন শক্তিবৃদ্ধি করে। দীর্ঘ সময় ধরে তিন শক্তির লড়াই হয়েছে সেখানে। আর তারই জেরে হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ গত দশ বছরে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিন লাখ আশি হাজার মানুষের।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠন যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, তিন লাখ আশি হাজার মানুষের মৃত্যু নথিবদ্ধ। কিন্তু তার বাইরেও আরো অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে বন্দি অবস্থায়। সংখ্যাটা দশ হাজারেরও বেশি বলে তাদের বক্তব্য। রিপোর্টটি তৈরি করতে সিরিয়ার একশোটিরও বেশি ডিটেনশন সেন্টার এবং দুই হাজার ৬৫০ জন আক্রান্তের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্তকারী দল। সেখান থেকেই এই তথ্য পেয়েছেন তারা।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি জেলে বন্দিদের অপরিসর জায়গার মধ্যে দিনের পর দিন থাকতে হয়। সেখানে বাথরুমের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। খাওয়ার জল অপরিশুদ্ধ, খাবারে মাটি স্বাভাবিক ঘটনা। চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বহু বন্দি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এর বাইরে আছে অত্যাচার।

বন্দিদেরমুখ থেকে মিথ্যে জবানবন্দি নেওয়ার জন্য অকথ্য অত্যাচার করা হয়। ইলেকট্রিক শক, শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, নখ-দাঁত উপড়ে নেওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা স্বাভাবিক অত্যাচার। এর বাইরে ধর্ষণ করা হয়। যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বহু বন্দির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বন্দিরা মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখার সময় তাদের বলা হয়েছে, মৃত্যু হলে কাকপক্ষীও জানতে পারবে না। এক নারীর সঙ্গে কথা বলেছে সংস্থাটি। তিনি জানিয়েছেন, সারাক্ষণ ডাইপার পরে থাকতে হয় তাকে। এতবার ধর্ষণ করা হয়েছে তাকে যে, মানসিক অবসাদে তার যৌনাঙ্গের পেশী কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

বহু শিশুর উপর অত্যাচারের বর্ণনা আছে ওই রিপোর্টে। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু সরকারি জেলে নয়, বিরোধীদের ডিটেনশন ক্যাম্পের ছবিও একইরকম। সেখানেও বন্দিদের উপর একই রকম অত্যাচার হয়।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বন্দিশিবিরে সব মিলিয়ে কত মানুষ মারা গেছেন, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। দশ হাজারের বেশি বন্দির মৃত্যু হয়েছে। অবিলম্বে আন্তর্জাতিক বিশ্ব এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলে মানবাধিকার আরও লঙ্ঘিত হবে বলে জানানো হয়েছে সেখানে। সূত্র: রয়টার্স, এএফপি

 

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.