মিয়ানমারে জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে ফের বড় বিক্ষোভের প্রস্তুতি

সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভয়াবহ এক রক্তাক্ত দিন দেখল দেশটি। পুলিশের গুলিতে ১৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর আজ সোমবারও (০১ মার্চ) দেশজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

হতাহতের ঘটনার পর সেনাবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। ফলে ব্যাপক মাত্রায় দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে জান্তা সরকার।

দাঙ্গা পুলিশের পাশাপাশি রোববার থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। সশস্ত্র সেনা-পুলিশ ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়, দাউই, মায়িক, বাগো, পোকোক্কুসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছে।

এদিকে গতকালের ওই সহিংসতা ও রক্তপাতের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি চালানো হয়েছে। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮ জন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সহিংসতার নিন্দা করছি এবং সেনাবাহিনীকে দ্রুত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। অহিংস বিক্ষোভে এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ অগ্রহণযোগ্য।

পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। রোববারের ঘটনায় সামরিক বাহিনীর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। একই সঙ্গে হতাহতের ঘটনার জেরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে জোটটি। এরই মধ্যে অভ্যুত্থানের জেরে মিয়ানমারে সব ধরনের সহায়তা বন্ধের পাশাপাশি দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে একমত হয়েছেন ইউরোপের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

সেনা অভ্যুত্থানের ২৮তম দিনে সবচেয়ে ভয়াবহতম সহিংসতা দেখল মিয়ানমারবাসী। শনিবারের ধারাবাহিকতায় রোববারও দেশটির প্রধান শহরগুলোর রাস্তা ছিল উত্তাল। সময় গড়ানোর সাঙ্গে সঙ্গে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ রূপ নেয় সহিংসতায়। সকাল থেকে বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ও স্টান গ্রেনেড ছুড়লে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ইয়াঙ্গুন ও দাওয়েই শহর। একে একে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। সেই সঙ্গে চলে গণগ্রেফতার।

একই পরিস্থিতি আরেক শহর ম্যান্দালেতেও। সাধারণ বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিলে সেখানেও বাধা দেয় দাঙ্গা পুলিশ। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেই দিনভর চলে বিক্ষোভ।

অন্যদিকে, রাজধানী নেইপিদোতে জান্তা সরকারবিরোধী মোটরর‌্যালি বের করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অবিলম্বে দেশটির নেত্রী অং সান সুচির মুক্তির দাবির পাশাপাশি নির্বাচিত সরকারের হাতে ফিরিয়ে দিতে জান্তা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।

গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ শীর্ষ রাজনীতিকদের আটক ও গৃহবন্দি করে। এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন সেনাপ্রধান মিন অং লাইং। তবে তার এ প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সু চিসহ গণতান্ত্রিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে দেশটিতে। এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনে ক্রমেই চড়াও হচ্ছে জান্তা সরকার। এ পর্যন্ত সহস্রাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিক্ষোভ বিষয়ে জেনারেল মিন অং হদ্মাইং বলেছেন, প্রতিবাদ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করছে এবং পুলিশ রাবার বুলেট ব্যবহারের মতো ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করছে।

তবে বিক্ষোভে গুলিতে নিহতের সংখ্যা তার এ বক্তব্যের উল্টো চিত্রই সামনে আনছে। ক্রমেই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.