পাঁচ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে ফের বিয়ের পিঁড়িতে শতায়ু দম্পতি

দেখতে দেখতে কেটে গেছে দাম্পত্যের ৯০টা বছর। কিন্তু তারপরও বিয়ের আনন্দ যেন রয়ে গিয়েছে সেই আগের মতোই। তাই তো এত বছর পরও ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন শতায়ু দম্পতি। দিনাজপুরের দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামের এই দম্পতির বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পাত্র ১০৭ বছরের বৈদ্যনাথ দেবশর্মা এবং পাত্রী ৯৮ বছরের পঞ্চবালা দেবশর্মা।

জানা গিয়েছে, এই দম্পতির সন্তান, তাদের সন্তানদের ঘরের সন্তান-সহ মোট পাঁচ প্রজন্ম নিয়ে জমজমাট সংসার। প্রচলিত লোকরীতি অনুযায়ী, পাঁচ প্রজন্মের মুখ দেখে এই দম্পতিকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে আবার বিয়ে দিয়েছেন তাদের ঘনিষ্ঠ স্বজনরা। বিয়ের আয়োজন ঘিরে স্বজনদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। পাড়া-প্রতিবেশীদেরও উৎসবের আমেজে কমতি নেই। হইহই ব্যাপার উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বিরল উপজেলার দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামে।

একশো পেরিয়ে ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসে নিজের প্রথম বিয়ের স্মৃতি ফিরে পাচ্ছিলেন ১০৭ বছরের বৈদ্যনাথ দেবশর্মা। মনে পড়ে যাচ্ছিল, প্রায় ৯০ বছর আগে কনে পঞ্চবালার বাবাকে ১৩ টাকা পণ দিয়ে বিয়ে করেছিলেন বৈদ্যনাথ। তখন তার বয়স ছিল ১৭, পঞ্চবালা ছিলেন ৮ বছরের। এতগুলো বছর কাটিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বৈদ্যনাথের নাতি ফটিকচন্দ্র দেবশর্মা। বৈদ্যনাথের দাবি, তার বাবা ভেলেগু দেবশর্মার হাতে লিখে যাওয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী, এখন তার বয়স ১০৭ বছর। বৈদ্যনাথ পেশায় কৃষক।

১৯৭২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ছিলেন। ঝিলকো মনি বালা নামে বৈদ্যনাথ-পঞ্চবালা দম্পতির এক মেয়ে আছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। নাতি-পুতিও হয়েছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৫৪।

বিয়ের প্রসঙ্গে বৈদ্যনাথ বলেন, আমাদের সন্তান হয়েছে। সন্তান থেকে নাতি-নাতনি। তাদেরও সন্তানাদি হয়েছে। এভাবে পাঁচপিড়ি (পাঁচ প্রজন্ম) হয়ে গেছে। পাঁচপিড়ি হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী বেঁচে থাকলে তাদের বিয়ে করতে হয়। এতে বংশের মঙ্গল হয়। নাতির সঙ্গে আলাপ করলে সে বিয়ের সব আয়োজন করে। আমার মতো পরবর্তী বংশধররাও যেন দীর্ঘ জীবন পায়।

বৈদ্যনাথ দেবশর্মা ও পঞ্চবালা দেবশর্মার বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে নানা আয়োজন চলে কয়েক দিন ধরে। মাসখানেক ধরে এই আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে সবাই। কার্ড ছাপানো, আত্মীয়স্বজনকে কাপড় কিনে দেওয়া, পূজা-পার্বণ, বাদ্য-বাজনা, বিয়ের অনুষ্ঠান, বাসি বিয়ে, বউভাত-বাদ যায়নি কিছুই।

আটানব্বই বছর বয়সী কনে পঞ্চবালা বলেন, ভালোই লাগছে। ছোটবেলার বিয়ের স্মৃতি খুব বেশি মনে না থাকলেও নাতি-নাতনিদের আয়োজনে এ বিয়েতে তিনি খুব আনন্দ পেয়েছেন বলে জানান।

বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন মহাদেব ভট্টাচার্য। তিনি জানান, এর আগে কখনো এ রকম বিয়ে দিইনি, দেখিনি। বর্তমান যেখানে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা হামেশাই ঘটছে, সেখানে এই দম্পতির একসঙ্গে এত বছর একসঙ্গে কাটানো ও নতুন করে বিয়ের আয়োজন সত্যিই অনন্য।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.