খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে পাউস প্যাক চালুর নির্দেশ

এক দশক আগেই আইন করে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি নিষিদ্ধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় প্রচলিত ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) প্রথাও বাতিল করে সরকার। তবে বাস্তবে তার কোনও প্রয়োগ না থাকায় এখনও বাজারে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ভোজ্যতেল খোলা সরবরাহ করছে কোম্পানিগুলো, যার মান ও দাম নিয়ন্ত্রণের কোন উপায় নেই সরকার ও কোম্পানিগুলোর হাতে।

এ অবস্থায় বাজারে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে আবারও। যারা প্যাকেটজাত তেল কিনতে পারবেন না তাদের জন্য চালু হবে ২৫০ মিলিলিটার থেকে ৫০০ মিলিলিটারের পাউস প্যাক। করপোরেট গ্রাহকদের জন্য ১০ থেকে ১৫ লিটারের টিনে তেল বাজারজাত করতে কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার (২৪ জানুয়ারি) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের এক সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম উঠানামার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে তেলের সংকট দেখা দেওয়া ও দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এ বৈঠক হয়েছে।

সভায় দেশের বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে সংকট ও দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মিলগুলো মধ্যস্বত্বভোগী খোলা তেল ব্যবসায়ীদের ওপর দায় চাপায়। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও মান নিশ্চিত করতে খোলা তেল বিক্রি না করে বোতলজাত বা পলিপ্যাকে বাজারজাত করতে কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করেন।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, হাতবদল হওয়ার কারণে বাজারে যাতে তেলের দাম না বাড়ে, সেজন্য কোম্পানিগুলোকে খোলাতেল বিক্রি না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখনও বাজারের ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ তেল খোলা বিক্রি হচ্ছে। এসব তেল বোতলজাত বা প্যাকেটে বিক্রি হলে তার গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ থাকবে। তখন মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়াতে পারবে না। এতে তেলের মানও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

গত এক দশকেও আইন কার্যকর না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে খোলা তেলের ৭০ ভাগ বোতলজাত করে বিক্রির উদ্যোগ নেবে কোম্পানিগুলো।

সভায় ভোজ্যতেল সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেন ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি। তাতে বলা হয়েছে, খোলা ভোজ্যতেল সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিশোধনকারী মিলগুলো ১৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা ৩ থেকে ৪ মাস সময় নেয়। এতে বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মিলগুলো তাদের উৎপাদন সক্ষমতার বেশি পরিমাণ সরবরাহ আদেশ ইস্যু করে, যা মূল্য বাড়ানোর সময় সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। মিলগুলোর সরবরাহ করা সাপ্লাই অর্ডার (এসও) হাত বদলের সুযোগ থাকায় সেকেন্ডারি বাজারে অতি মুনাফা ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ার প্রবণতার সময় মিলগুলো আগে ইস্যু করা এসও’র বিপরীতে তেল সরবরাহ কমিয়ে পরে বেশি দামে ইস্যু করা এসও’র বিপরীতে সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। আর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার প্রবণতা থাকলে এসও মালিকরা তেল উত্তোলনে অনীহা দেখায়। এতে সরবরাহ লাইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মিল মালিকরা রেগুলার এসও ইস্যু ছাড়াও অনেক সময় বিশেষ এসও ইস্যু করে, যা বাজারে সরবরাহ লাইনে সমস্যার সৃষ্টি করে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.