আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান উপদেষ্টা এএফএম শাহীনুল ইসলামের নিয়োগ বাতিল করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) জারি করা অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এর আগে আপত্তিকর ভিডিও কেলেঙ্কারি ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে উপদেষ্টা শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত হয় এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন পদক্ষেপ না নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
তদন্তের তথ্য
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কিত ব্যবসায়ী খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা ব্যাংক হিসাব থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেন উপদেষ্টা শাহীনুল ইসলাম। পাশাপাশি তাঁর এবং স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবেও অস্বাভাবিক নগদ জমার প্রমাণ মেলে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে উপদেষ্টা শাহীনুল ও তাঁর স্ত্রীর দুটি হিসাবে ২০২৪ সালের মে মাসে একাধিক নগদ জমার ঘটনা ধরা পড়ে। এক মিজানুর রহমান নামের ব্যক্তি ১২ মে উপদেষ্টা শাহীনুলের হিসাবে ২৩ লাখ টাকা, এর আগে ৪ ও ৫ মে তাঁর স্ত্রীর হিসাবে যথাক্রমে ১৫ লাখ ও ৫ লাখ টাকা জমা দেন।
ভিডিও কেলেঙ্কারি ও উত্তেজনা
গত ১৮ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপদেষ্টা শাহীনুল ইসলামের আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও তিনি ভিডিওগুলো ভুয়া বলে দাবি করেন। তবে ফরেনসিক পরীক্ষায় এর সত্যতা মিলেছে। ঘটনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিবাদে তাঁকে অফিস ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং পরে সরকার তাঁকে ছুটিতে পাঠায়। এর পর থেকে উপদেষ্টা শাহীনুল আর কর্মস্থলে ফেরেননি।
তদন্ত কমিটি ও সুপারিশ
ঘটনার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অতিরিক্ত সচিব সাঈদ কুতুবকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, আইসিটি বিভাগের পরিচালক পরিচালক মতিউর রহমান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সচিব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
বিতর্কিত নিয়োগের পটভূমি
২০২৪ সালের আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্দোলনের মুখে বিএফআইইউ প্রধান উপদেষ্টা মো. মাসুদ বিশ্বাস পদত্যাগ করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন উপদেষ্টা একেএম এহসান, যিনি শেখ হাসিনার পরিবারসহ শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাঁকে স্থায়ী করা হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সার্চ কমিটির সুপারিশে নাম না থাকা সত্ত্বেও উপদেষ্টা শাহীনুল ইসলাম বিএফআইইউ প্রধান হন। শুরু থেকেই তাঁর নিয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ মনে করেছিলেন অনেক কর্মকর্তা।
অবশেষে নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, দেরিতে হলেও এই পদক্ষেপ আর্থিক খাতের ভাবমূর্তি রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.