স্কুল ব্যাংকিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও ডিসেম্বর শেষে বেড়েছে হিসাব খোলার পরিমাণ। মাসটিতে মোট হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৯টি। এর আগের মাসে যার পরিমাণ ছিল ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৯০৭টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৩৭ হাজার ৩৩২টি। তবে আগের চেয়ে আমানতের পরিমাণ কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের হিসাবে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার আমানত ছিল। অর্থাৎ এক মাসের তুলনায় আমানত কমেছে ২১ কোটি টাকা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই দেশে ডলার সংকট চলছিল। একই সঙ্গে কমতে থাকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে। এতে ব্যাপক হারে চাপ বাড়ছে রিজার্ভে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ পরিবার ভুগছে আর্থিক সংকটে। ফলে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ কয়েক মাস ধরে কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৯টি। এর মধ্যে ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫টি হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ২২ লাখ ৯ হাজার ২৩৪টি হিসাব গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিল ৩৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৪৩টি। আগস্টে এ ধরনের হিসাব খোলা হয় ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৮২০টি। এরপরে সেপ্টেম্বরে এসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাবের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ২১০টি। পরের মাস অক্টোবরে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯৪টি। নভেম্বর মাসে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৯০৭টি এবং সবশেষ ডিসেম্বর মাস হিসাব আরও বেড়ে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৯টিতে দাঁড়ায়।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ে ৩২ লাখ ৬০৫ শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা হয়েছিল। এ সময় আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।
শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহী করতে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচীর পুনঃপ্রবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেশ সফলতা পায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসছে। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। এর পরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়।
অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.