২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালীকরণের খসড়া প্রস্তুত করেছে। জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে তামাকের কুপ্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য গৃহীত এই পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব এই সংশোধনীটি চুড়ান্ত করার জন্য আইন প্রণেতাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে উন্নয়ন সমন্বয়ের আহ্বানে ‘ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ, নাট্যকার রুমা মোদক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, এটিএন নিউজের চিফ এক্সিকিউটিভ এডিটর মুন্নী সাহা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ফুটবলার শেখ মোহম্মদ আসলাম, এবং দেশের প্রথম নারী ফুটবলার ও কোচ রেহানা পারভীন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীটি চুড়ান্ত হলে কর্মসংস্থান ও বৃহত্তর অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে বলে ভুল প্রচারণা চালাচ্ছে স্বার্থন্বেষি মহল। এই সংশোধনীটি চুড়ান্ত হলে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত হবে এবং এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের ব্যবসা ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষতি হবে না। বরং তামাক ব্যবহার কমে আসার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করে শক্তিশালীকরণের এই উদ্যোগের মাধ্যমে বৃহত্তর জনস্বার্থের প্রতি নীতি-নির্ধারকদের সংবেদনশীলতা প্রতিফলিত হয়েছে বলে বক্তারা মনে করেন। তবে যেহেতু তামাকের কারণে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চারশো মানুষ এ দেশে মৃত্যুবরণ করেন, তাই যতো দ্রুত সম্ভব খসড়া সংশোধনীটি চুড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তারা উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার সুযোগ বাতিল এবং সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে যথাক্রমে পরোক্ষ ধূমপান থেকে নাগরিকদের কার্যকর সুরক্ষা দেয়া এবং কমবয়সীদের সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত হওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে বলে মনে করেন তারা।
সাবেক ফুটবলার শেখ মোহম্মদ আসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে সচেতন করতে হবে। অন্যদিকে, নাট্যকার রুমা মোদক উল্লেখ করেন, নিম্নআয়ের মানুষ ও শ্রমজীবিদের বাচাঁতে হলে এই আইন সংশোধনের পাশাপাশি প্রয়োগের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তথ্য বিভ্রাটের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে শ্যামল দত্ত বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে, ফলে সরকার ভয় পায় আইন শক্তিশালী করতে।
আবার তামাক কোম্পানির সিএসআর বিষয়ে উল্লেখ করে সাংবাদিক মুন্নী সাহা বলেন, এই কোম্পানিগুলো মিডিয়া হাউজে তামাক বিরুধী রিপোর্টিং না করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সিএসআর করে থাকে, যার ফলে এই ধরণের সচেতনতামূলক প্রচারণার উদ্দ্যোগ দেখা যায় না।
ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, তামাকের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে শিশুদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে। আবার, পাঠ্যপুস্তকে আরও বেশিমাত্রায় তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত।
২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকারটি বাস্তবায়নের জন্য একটি রোডম্যাপের তৈরির বিষয়ে জোর দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।
অর্থসূচক/এইচএআই



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.