পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ ছাড়া আজ (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এখনও প্রায় উপকূল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ঝড়টি। ফলে দেশের কোন কোন উপকূলে আঘাত হানতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। প্রায় সব উপকূলেই এর প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারীবর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ পরিণত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। আজ দুপুরের পর ঘূর্ণিঝড়টি এগিয়ে এসেছে। এটি দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল, এখন সেটি ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৭১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন ৭০০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৬৯৫ কি.মি. দক্ষিণে, এখন ৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঝড়ের কেন্দ্রে ৪৮ থেকে বেড়ে ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ থেকে বেড়ে ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ থেকে বেড়ে এখন ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এর আগে এটি নিম্নচাপ থাকা অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছিলেন, নিম্নচাপটি এখনো ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি। যদি এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তাহলে নাম দেওয়া হবে সিত্রাং। দেশের ১৯টি জেলার ৭৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকায় ৩-৫ ফুট উচ্চ জোয়ার নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ২৫ অক্টোবর ভোরে বাংলাদেশের তিনকোনা এবং সন্দীপের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.