ঝড়ের তাণ্ডবেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে স্মলক্যাপের শেয়ার!

দেশের পুঁজিবাজার চরম অস্থির হয়ে উঠেছে। ব্যাপক দরপতন আর ক্রেতা-শূন্যতায় বাজার ধুকছে। বাজারে যেন ঝড়ের তাণ্ডব চলছে। তবে এই চিত্র স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডের। বাজারের অপর বোর্ড, স্মল ক্যাপ বা এসএমই বোর্ডের চিত্র ছিল একেবারে বিপরীতে। ঝড়ো বাতাসে মূল বোর্ড নুইয়ে পড়লেও এসএমই বোর্ডের কোম্পানিগুলো বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। আর এর পক্ষ-বিপক্ষে আছে নানা মতামত ও বিশ্লেষণ।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মূল বোর্ডে প্রায় ৯০ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছে। এই বাজারে ৩৮২টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২১টির দাম বেড়েছে। কমেছে ২৪৪টির দাম। আর ১৭টির দাম ছিল অপরিবর্তিত।

অন্যদিকে এসএমই বোর্ডে আজ শতভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এই বাজারে ১৩টি কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। আর ১৩টিরই সমাপনী দাম ছিল আগের দিনের চেয়ে বেশি। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

অবশ্য আগের দিন মূল বোর্ডের  কোম্পানিগুলোর মতো এসএমই বোর্ডের কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও ব্যাপক দর পতন হয়েছে। আর পতনের এই হার ছিল মূল বোর্ডের চেয়েও অনেক বেশি। মূল বোর্ডের বর্তমান সার্কিটব্রেকারের কারণে ২ শতাংশের বেশি দাম কমতে পারে না শেয়ারের। কিন্তু এসএমই বোর্ডের সার্কিটব্রেকার অনুসারে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম। সোমবার প্রায় ১০ করে কমেছে এসএমই বোর্ডের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম। আজ মঙ্গলবারও শুরুতে সবগুলো কোম্পানির (নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া আছিয়া সি ফুড ছাড়া) শেয়ারের দাম ৫ শতাংশের বেশি হারে কমে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই মূল্য পুনরুদ্ধার হয়।

স্রোতের বিপরীতে এসএমই বোর্ডের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা নানাভাবে দেখছেন। কেউ কেউ এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টিকে বেশ অস্বাভাবিক মনে করছেন। তাদের মতে, এমনিতেই কোম্পানিগুলোর  শেয়ারের দাম বেড়ে অযৌক্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটির স্বাস্থ্যও তেমন ভাল নয়। এমন বাস্তবতায় নাজুক বাজারেও এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনায় সন্দেহ হয়, পেছনে হয়তো কোনো কারসাজি আছে।

অন্যদিকে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, এসএমই বোর্ডের শেয়ারের ঘুরে দাঁড়ানোর  বিষয়টি বেশ স্বাভাবিক। তাদের মতে, বাজারে যখন তারল্য কম থাকে, নানা অনিশ্চয়তা থাকে, তখন সাধারণত স্বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ে। তাতে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে যায়। কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য, ইপিএস, পিই রেশিও-ইত্যাদি তেমন প্রভাব রাখে না তখন। আসলে পুঁজিবাজার সব সময় যৌক্তিক আচরণ করে না। আর বিশ্বজুড়েই এমনটি দেখা যায়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনেক বেশি নজর রাখতে হবে; দেখতে হবে অধিক সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের কারণে শেয়ারের দাম বাড়ছে, না-কি এর পেছনে কারসাজি আছে। কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.