পরিত্যক্ত সাবওয়ে স্টেশনে শপথ নেবেন নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র

২০২৬ সালকে বরণ করতে যখন হাজার হাজার নিউইয়র্কবাসী টাইমস স্কয়ারে ভিড় জমাবেন, ঠিক তার আগে নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পরিত্যক্ত এক সাবওয়ে স্টেশনে শপথ নেবেন। ওই স্টেশন আমেরিকার ‘গিল্ডেড এজ’ বা সমৃদ্ধির যুগে তৈরি করা হয়েছিল।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) নিউওয়ার্ক টামসসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

৩৪ বছর বয়সী নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি নববর্ষের আগের রাতে নিউইয়র্কের সিটি হলের নিচে অবস্থিত এ পরিত্যক্ত স্টেশনে শপথ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। বর্তমানে এ স্টেশন লোকাল ‘৫ নম্বর’ ট্রেনের ঘোরার পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ব্যতিক্রমী জায়গা বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে জোহরান মামদানি বলেন, এটি প্রতীকীভাবে একটি ‘নতুন যুগের সূচনা’–কে জাগিয়ে তুলছে।

নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ স্থাপনা এমন এক শহরের স্মৃতিস্তম্ভ, যা একসময় সুন্দর হওয়ার সাহস দেখাত এবং শ্রমজীবী মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার মতো বড় কিছু গড়ে দিত। সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা যেন কেবল অতীতের স্মৃতি হয়ে বা সিটি হলের সুড়ঙ্গের নিচে আটকা পড়ে না থাকে, সে জন্য এ আয়োজন। ওপরের ভবন (সিটি হল) থেকে যাঁরা নিউইয়র্কবাসীদের সেবা করার সুযোগ পাবেন, তাঁদের লক্ষ্য হবে সে চেতনাকে ফিরিয়ে আনা।

নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি আরও যোগ করেন, নতুন সুযোগের এ যুগে লাখ লাখ নিউইয়র্কবাসীকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি ধন্য এবং শহরের এ মহান ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিতে পেরে নিজেকে সম্মানিত মনে করছেন।

১৯০৪ সালে নিউইয়র্কে প্রথম চালু ২৮টি স্টেশনের একটি হচ্ছে এ স্টেশন। পরে ১৯৪৫ সালে আধুনিকায়নের সময় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে এটিকে নিউইয়র্কের ‘ল্যান্ডমার্ক’ এবং ২০০৪ সালে জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

নতুন মেয়র জোহরান মামদানিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস। এরপর আজ বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে সিটি হলের সিঁড়িতে আরেকটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স তাঁকে শপথ পাঠ করাবেন। এরপর ব্রডওয়েতে একটি বড় উৎসবের (ব্লক পার্টি) আয়োজন করা হবে।

নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস বলেন, সাবওয়ে স্টেশন বেছে নেওয়াটা যথার্থ হয়েছে। কারণ, ট্রেনব্যবস্থা নিউইয়র্কবাসীর জন্য এক ‘মহাসাম্য’ বা সবাইকে এক করার জায়গা।

অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস বলেন, ‘জোহরান আমাদের পরবর্তী মেয়র। কারণ, তিনি বোঝেন, আমরা যে সাবওয়ে লাইনই ব্যবহার করি না কেন, একে অপরের পাশে থাকা সব নিউইয়র্কবাসীর এমন একটি শহর পাওয়ার অধিকার আছে, যেখানে তারা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে।’

নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির শপথ অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়রদের মধ্যে কেবল প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাসিও উপস্থিত থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন। মাইকেল ব্লুমবার্গ বা রুডি জুলিয়ানি এখনো কিছু জানাননি। বিদায়ী মেয়র এরিক অ্যাডামসও তাঁর উপস্থিতির বিষয়টি অস্পষ্ট রেখেছেন।

গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, তিনি জোহরান মামদানির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হতে চান, যেন তাঁর উপস্থিতি কোনো ‘বিঘ্ন’ না ঘটায়। তিনি পরোক্ষভাবে জোহরান মামদানির সমর্থকদের সমালোচনা করে বলেন, ‘দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। তবে দুর্ভাগ্যবশত তাঁর কিছু সমর্থক আছেন, যাঁরা সবকিছুতেই প্রতিবাদ করতে পছন্দ করেন। তিনি চাইলে আমি যাব।’

জবাবে নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি বলেন, সাবেক মেয়রকে অবশ্যই স্বাগত।

জোহরান মামদানি শপথ নেওয়ার আগেই তাঁর ফায়ার ডিপার্টমেন্ট প্রধানকে বাছাই নিয়ে সমালোচনা করেছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তিনি যখন লিনিয়ান বনসিনোর নামের অভিজ্ঞ নারী ইএমএস কর্মকর্তাকে ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন, তখন ইলন মাস্ক তাঁর অভিজ্ঞতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

জবাবে নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি এক্সে লিখেছেন, ‘অভিজ্ঞতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই আমি এমন একজনকে নিয়োগ দিয়েছি, যিনি ইএমএসে ৩০ বছরের বেশি সময় কাটিয়েছেন। মনে রাখবেন, ফায়ার ডিপার্টমেন্টে আসা ৭০ শতাংশ ফোনই ইএমএস কর্মীরা সামলান।’

গত সপ্তাহে বিদায়ী মেয়র এরিক অ্যাডামস ৩৭ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মার্ক গুয়েরাকে সাময়িক সময়ের জন্য ফায়ার চিফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি বলেন, অন্য কোনো ঘটনা লিনিয়ানের দক্ষতাকে ম্লান করতে পারবে না। বর্তমান মেয়র এ বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.