চলতি বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ৬৫২ জন অভিবাসী ছোট নৌকায় ব্রিটিশ উপকূলে পৌঁছেছেন। এই সংখ্যা পুরো ২০২৪ সালের মোট আগমনের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
গত বছর যুক্তরাজ্যে অনিয়মিতভাবে পৌঁছেছিলেন ৩৬ হাজার ৮১৬ জন অভিবাসী। তবে এখনো ২০২২ সালের রেকর্ড ভাঙেনি। সে বছর মোট ৪৫ হাজার ৭৭৪ জন অভিবাসীর আগমন রেকর্ড করা হয়েছিল।
সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর ৪৯৭ জন অভিবাসী ডোভার বন্দরে পৌঁছান। এর মধ্য দিয়েই চলতি বছরে অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা ৪০ হাজারের গণ্ডি ছাড়ায়। ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই প্রবণতা ঠেকানো নিয়ে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা নিরুৎসাহিত করতে গত মাসে সরকার একটি কঠোর অভিবাসনবিরোধী পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর আওতায় শরণার্থীদের রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে আড়াই বছর করা হচ্ছে এবং স্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ার শর্ত আরও কঠোর করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ জানিয়েছেন, আশ্রয়প্রার্থীরা কেবল একবার আবেদন এবং একবার আপিলের সুযোগ পাবেন। সরকারের আশা, এতে করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।
তবে এসব কঠোর নীতির পরও উত্তর ফ্রান্সের কালেতে অবস্থানরত অনেক অভিবাসী তাদের পরিকল্পনা বদলাতে রাজি নন। অনেকেই নতুন সংস্কারের বিষয়ে অবগত নন, আবার কেউ কেউ এত দূর পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে যেতে চান না।
১৮ বছর বয়সী এক সুদানিজ তরুণ বলেন, আফ্রিকা থেকে মরুভূমি ও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসার পর এখন আর থামার সুযোগ নেই।
অনিয়মিত অভিবাসন কমাতে এ গ্রীষ্মে প্যারিস ও লন্ডনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এর আওতায় ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো কিছু অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হচ্ছে এবং এর বিনিময়ে যুক্তরাজ্য সমসংখ্যক অভিবাসীকে বৈধভাবে গ্রহণ করছে। চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচির আওতায় ১৫৩ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যম জানিয়েছে।
এদিকে অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতে ব্রিটেনে জনক্ষোভও বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে লন্ডনে আয়োজিত এক বিক্ষোভে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে উগ্রডানপন্থি কয়েকটি গোষ্ঠী ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলে নৌকা ভাঙচুরের মতো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, যা বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.