নির্বাচনে মিয়ানমারের জান্তাপন্থী রাজনৈতিক দলের ভূমিধস বিজয়ের দাবি

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের প্রথম ধাপে বিপুল ভোটে বিজয়ের দাবি করেছে জান্তাপন্থী রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দলটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের কথা জানান।

এর আগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও গণতন্ত্র পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী সতর্ক করে বলেছিল, সামরিক জান্তার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন মিয়ানমারে সামরিক শাসনকে আরও শক্তিশালী করবে।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। চার বছরের বেশি সময় পর দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয় জান্তা সরকার। মাসব্যাপী তিন ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ রোববার অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক বাহিনী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

ইউএসডিপির ওই জ্যেষ্ঠ সদস্য জানান, যেসব এলাকায় ভোট গণনা শেষ হয়েছে, সেসব অঞ্চলের নিম্নকক্ষের ১০২টি আসনের মধ্যে দলটি ৮২টিতে জয় পেয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, রোববার যেসব আসনে ভোট হয়েছে, তার ৮০ শতাংশের বেশি আসনে ইউএসডিপি বিজয়ী হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউএসডিপি মূলত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বেসামরিক প্রক্সি দল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী নেপিদোর আটটি শহরের সবগুলোতেই ইউএসডিপি জয়ী হয়েছে। ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিক অনুমতি না থাকায় তিনি পরিচয় গোপন রাখেন।

২০২০ সালের নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির কাছে ইউএসডিপির ভরাডুবি ঘটে। অভ্যুত্থানের পর এনএলডিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং চলমান নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নেই। নোবেলজয়ী অং সান সু চি অভ্যুত্থানের পর থেকে আটক রয়েছেন।

অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিক ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান এই নির্বাচনকে একতরফা ও অগ্রহণযোগ্য বলে নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বিরোধী মত দমন, প্রার্থীতালিকায় সামরিক মিত্রদের প্রাধান্য এবং ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।

একটি আন্তর্জাতিক থিঙ্কট্যাংকের গবেষণা ফেলো মর্গান মাইকেলস বলেন, নির্বাচনে ইউএসডিপির আধিপত্য বিস্তার অপ্রত্যাশিত নয়। তার মতে, এই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং জান্তা নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন আগেই ফল নির্ধারণ করে রেখেছে।

মিয়ানমারের ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেনি। আগামী ১১ ও ২৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরবর্তী দুই ধাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে নিম্নকক্ষের প্রতি পাঁচটি আসনের একটি আসনে ভোট আয়োজন সম্ভব হয়নি বলে জান্তা সরকার স্বীকার করেছে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.