ব্যবসা-বাণিজ্য অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও জটিল অনুমতির ভারে জর্জরিত: আমীর খসরু

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও জটিল অনুমতির ভারে জর্জরিত। একটি রেস্টুরেন্ট চালু করতে কোথাও ১৯টি, কোথাও ২১টি অনুমতি লাগে। পরিবেশ ছাড়পত্র পেতেই দুই মাস লেগে যায়। এই অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ মূলত দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর জন্য সুবিধাজনক হলেও সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য তা বড় বাধা। তাই দুর্নীতি কমাতে সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিকদের মধ্যে ফিজিক্যাল কন্ট্যাক্ট (সরাসরি যোগাযোগ) ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।

গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরে আয়োজিত বাণিজ্য সংলাপে এসব দাবি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। এতে প্রধান অতিথি বক্তব্যে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ সব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে নগরের র‍্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে এ আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরাম। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি বিষয় আমলাতন্ত্রের হাত থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে দিতে চাই। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সব ক্ষেত্রে অটোমেশন করতে হবে। এতে একটি কনটেইনার আনতে যত কাজ করতে হয়, যত পারমিশন নিতে হয়, সব কটির জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে।

বিগত ১৭ বছর চট্টগ্রামকে শুধু কাগজে-কলমে বাণিজ্যিক রাজধানী করা হয়েছে। এখন সময়ে এসেছে চট্টগ্রামকে বাস্তবে বাণিজ্যিক রাজধানী করার। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরকে জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে আরও রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) গড়ে তোলা দরকার। সেই সঙ্গে পণ্য পরিবহনে ঢাকা-চট্টগ্রাম আলাদা রেললাইন করতে হবে। মহাসড়কে ওজন স্কেলের বিষয়েও ব্যবসায়ীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বংশীবাদক ক্যউপ্রু মারমা বাঁশির সুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। শুরুতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সহসভাপতি সুলতানা নুরজাহান। তিনি নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সমাজের নানা সমস্যার কথা তুলে দেন।

চট্টগ্রামকে বাস্তবে বাণিজ্যিক রাজধানী করার দাবি জানান বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। আর ব্যবসায়ীদের সহজভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার কারণে চট্টগ্রামে তৈরি পোশাকের ক্রেতারা আসেন না। আশা করছি, এ সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। চট্টগ্রামে আরও ইপিজেড করা দরকার। যদি ইপিজেড করা হয়, তাহলে আমরা নতুন শিল্প গড়ে তুলব।’

এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলার সুযোগ চাই।’

সী কম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বাংলাদেশের সিমেন্ট ও ইস্পাতশিল্প মরে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মাত্র ৮০ কিলোমিটার কডলাইন গত ৫৩ বছরে স্থাপন করা যায়নি।

চেম্বারের সাবেক সভাপতি আলী আহ্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বান্দরবান চেম্বারের সদস্য মো. জসিম উদ্দিন, চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক মানিক উর রহমান, রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ফার্নিচার প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর আব্দুস সালাম, বিজিএপিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মো. শহীদ উল্লাহ চৌধুরী, আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী প্রমুখ।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.