বিজয় দিবসে ঘিরে খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তনদের মিলনমেলা ফুটসাল ফেস্ট সিজন–১

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ফুটসাল ফেস্ট সিজন–১। এই ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া আয়োজনের মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিণত হয় আনন্দ, আবেগ ও স্মৃতিচারণার এক মিলনমেলায়। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সংগঠন ওবাক (ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন অব খিলগাঁও)–এর উদ্যোগে আয়োজিত এই ফুটসাল টুর্নামেন্টে অংশ নেন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। খেলাধুলার পাশাপাশি বিজয় দিবসের চেতনা ও বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে একসূত্রে বাঁধার লক্ষ্যেই এই আয়োজন করা হয়।

দিনের শুরুতেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। ওবাকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এই মুহূর্তে উপস্থিত সবাই গভীর শ্রদ্ধা ও আবেগের সঙ্গে বিজয়ের পেছনে থাকা ত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করেন, যা পুরো আয়োজনের মধ্যে একটি গম্ভীর অথচ গর্বের আবহ তৈরি করে।

এরপর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক পর্ব। কোরআন তিলাওয়াত শেষে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। জাতীয় সংগীত চলাকালে বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে দেশের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন। লাল-সবুজের আবহে জাতীয় সংগীতের এই মুহূর্ত ফুটসাল ফেস্টকে কেবল একটি খেলাধুলার আয়োজন নয়, বরং বিজয় দিবসের একটি অর্থবহ অংশে পরিণত করে। জাতীয় সংগীত শেষে বেলুন উড়িয়ে ফুটসাল ফেস্ট সিজন–১–এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

বিকেল ৪টায় খেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হাফিজুর রহমান ময়না। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বহু প্রজন্মের জীবনের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। বিজয় দিবসের মতো তাৎপর্যপূর্ণ দিনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এমন একটি ক্রীড়া আয়োজন বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। তিনি আরও বলেন, খেলাধুলা মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলা, সহনশীলতা ও নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি করে, যা সমাজ গঠনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এই আয়োজনে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ ছাড়াও শিক্ষক, বর্তমান শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে জানান, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শুধুই স্মৃতির নয়, এটি দায়িত্ব ও ভালোবাসার জায়গা। ওবাকের মাধ্যমে এমন আয়োজন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ফুটসাল ফেস্ট সিজন–১–এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের মোট ৮টি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের মধ্যেও পুরো আয়োজনজুড়ে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। নির্ধারিত ফুটসাল নিয়ম মেনে সব ম্যাচ পরিচালনা করা হয়। টুর্নামেন্টের প্রধান রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মামুন স্যার। তার অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খল পরিচালনায় প্রতিটি ম্যাচ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, যা খেলোয়াড় ও দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা পায়।

খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সুনামের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহশিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব দিয়ে আসা এই প্রতিষ্ঠানটি ফুটসাল ফেস্টের মতো আয়োজনের মাধ্যমে সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রাখছে। ওবাকের উদ্যোগে আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট বিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দিনের শেষে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিদ্যালয়ের প্রথম দিকের প্রাক্তন ছাত্র ও বিশিষ্ট সমাজসেবক হাফিজুর রহমান ময়না, ননী কণা সহ অন্যান্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অংশগ্রহণকারী সব দলের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানানো হয় এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এমন আয়োজন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।

মাঠজুড়ে করতালি, উচ্ছ্বাস আর আনন্দধ্বনিতে ফুটসাল ফেস্ট সিজন–১ শেষ হয় এক আনন্দঘন পরিবেশে। আয়োজক সংগঠন ওবাক জানায়, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে ভবিষ্যতে এই ফুটসাল ফেস্টকে নিয়মিত আয়োজন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সব মিলিয়ে, বিজয় দিবসের চেতনায় আয়োজিত এই ফুটসাল ফেস্ট কেবল একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং প্রজন্মের বন্ধন ও বিদ্যালয়ের গৌরবকে উদযাপনের একটি স্মরণীয় উদ্যোগ হয়ে থাকল।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.