১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা করবে—এটি আমি মনে করি যে রীতিমতো একটা অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মো. শামীম উদ্দিন খান।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন অধ্যাপক মো. শামীম উদ্দিন খান।
সম্মানিত উপস্থিতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার কাছে বিশাল কোয়েশ্চেন যে যে সময় আমি দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করতেছি আমি জীবিত থাকবো কিনা, মৃত থাকবো কিনা সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয় নাই। সেই সময় সেই পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা করবে—এটি আমি মনে করি যে রীতিমতো একটা অবান্ত। এটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে একটা দেশের রাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে।
চবি সহ–উপাচার্য আরও বলেন, আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হই ১৯৮৫ সালে, তখন আমি সবসময় মনে করতাম যে কালো কালি লেখা কখনো মিথ্যা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমি দেখলাম যে গণমাধ্যমে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার হলে যে ঘটনা ঘটেনি, তা এত সুন্দরভাবে নিখুঁতভাবে লিখে তুলে ধরছে। দেখার পরবর্তীতে আমি বললাম, এটা কি বাংলাদেশের পত্রিকা, এটাই কি কালো লেখা যেটাকে আমি এত গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটছে, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সত্যিকারভাবে প্রথমভাবে আমরা সবাই জানি যে কোনো একটা গোষ্ঠীর ওপর দায় চাপানো হয়, কোনো ব্যক্তির ওপর দায় চাপানো হয়। পর ১৫ বছর, ২০ বছর পরে দেখি যে ওই লোক খালাস, আসলে প্রকৃত আসামি আরেকজন। এই বিষয়গুলো কেন হচ্ছে—একটার পর একটা নারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে একটা জাতিকে প্রভাবিত করার জন্য, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে স্যারের কাছে আমি একটু প্রশ্ন রাখব। আপনি একজন দেশের বুদ্ধিজীবী, অনুগ্রহপূর্বক জাতিকে মুক্তি দানের জন্য এই ১৪ ডিসেম্বর কী ঘটনা ঘটেছিল—একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গ্রহণ করার জন্য আমি আপনাকে অনুরোধ করবো।
তিনি বলেন, গতকালকে আমি রাতে যখন দেখলাম যে টিভিতে টকশো চলতেছে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আক্তারমান বক্তব্য রাখতেছেন। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে আপনি তো বলতেন আগে লক্ষ লক্ষ লোক শাহাদাত বরণ করছে ১৯৭১ সালে, এখন আপনি তার বিপরীত রাজনীতিতে যুক্ত হলেন—এটি কেন। তিনি বললেন যে এগুলো হচ্ছে রেটরিক বক্তব্য, এগুলো তো সত্য নয়।
বক্তব্যে তিনি বলেন, রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না, আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে সেই ঘটনা জানতে চাই। কারা কারা শহীদ হয়েছে সে তথ্য জানতে চাই, কারা কারা হত্যা করেছে সে তথ্য আজকে পর্যন্ত আমাদেরকে জানানো হয় নাই। আজ পর্যন্ত শহীদের লিস্ট তৈরি হয় নাই, আজ পর্যন্ত রাজাকারের লিস্ট তৈরি হয় নাই। শুধু আমরা বক্তব্য দিয়ে জাতিকে একের পর এক বিভ্রান্ত করতেছি আর জাতিকে বিভক্ত করতেছি।
সবাইকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই সমস্ত অপপ্রচার থেকে, এই সমস্ত মিথ্যা প্রোপাগান্ডা থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দিন এবং জাতিকে একটা সঠিক দিশা দিন। যে সমস্ত শহীদরা জীবন দিয়েছে এ দেশকে সত্যিকারভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালনা করার জন্য, তাদের সেই পথে আমরা জাতি যেতে পারে—এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.