ফেড আবারও কমাল যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার

আবারও নীতি সুদহার কমাল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এ নিয়ে বছরে তিনবার এ হার কমানো হলো। ফলে বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারীরা এত দিন যে ধারণা করছিলেন, তা সত্য প্রমাণিত হলো।

গতকাল বুধবার ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় হারে নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার এখন ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার এখন তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রয়টার্সের এক প্রতিদেবনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বাস্তবতা হলো, ফেডের নীতি সুদহারের প্রভাব কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশ্ব অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ে। সে কারণে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা ফেডের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের গতি কমে গেছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী। প্রেসিডেন্ট পদবি ডোনাল্ড ট্রাম্প–এর শুল্কনীতির প্রভাব মার্কিন ভোক্তাদের জীবনে পড়তে শুরু করেছে। ফেডারেল রিজার্ভ কীভাবে এই দ্বিমুখী বাস্তবতা মোকাবিলা করবে, তা নিয়ে অবশ্য দ্বিমত আছে। ফেড এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এর মধ্যেও তারা জানিয়েছে, আগামী বছর একবার নীতি সুদহার কমানো হতে পারে, যদিও বিষয়টি নির্ভর করবে অর্থনৈতিক তথ্য–উপাত্তের ওপর।

ফেডের চেয়ারম্যান পদবি জেরোম পাওয়েল বলেছেন, চলতি বছর যে তিনবার নীতি সুদহার কমানো হলো, মার্কিন অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়ল, ফেড তা খতিয়ে দেখবে। আগামী জানুয়ারি মাসে আবারও ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক। তার আগে নীতিপ্রণেতারা সবকিছু খুঁটিয়ে দেখবেন। সাংবাদিকদের পাওয়েল বলেন, ‘অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ে, তা দেখার জন্য ভালো অবস্থানে আছি। ফলে যাঁরা চান, ফেড আরও বেশি হারে নীতি সুদহার হ্রাস করুক, তাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদবি ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই দলে আছেন।’

পাওয়েল বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ এখন বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়তি, আরেক দিকে বেকারত্বও বাড়তি—এ দুই বিষয় একসঙ্গে মোকাবিলা করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পদবি ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবারই নীতি সুদহার কমানোর পক্ষপাতী। ফলে ফেড যে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় হারে নীতি সুদহার কমিয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। গতকাল ফেডের বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেছেন, অন্তত শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় হারে নীতি সুদহার কমানো উচিত ছিল।

হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের নীতি সুদহার আরও কম হওয়া উচিত ছিল। বলা উচিত, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদের হার আমাদের হওয়া উচিত।’

মূলত কর্মবাজার চাঙা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কম সুদে ঋণ নিয়ে সম্প্রসারণে যাবে আর তার হাত ধরে কর্মসংস্থান বাড়বে—অর্থনীতির এই অমোঘ নিয়ম মেনে এই নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত।

নীতি সুদ কী

অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে হারে অর্থ ধার নেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ব্যাংকগুলো আবার তার সঙ্গে নিজেদের মুনাফা যোগ করে গ্রাহকদের ঋণ দেয়।

ফলে নীতি সুদহার বাড়লে ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে যায়, সমাজে তারল্য কমে, বিনিয়োগ কমে এবং কর্মসংস্থানও কমে। আবার যখন কর্মসংস্থান বাড়াতে হয় বা অর্থপ্রবাহ বাড়াতে হয়, তখন নীতি সুদহার কমানো হয়।

ফেডের নীতি সুদহারের বৈশ্বিক প্রভাব

বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে।

নীতিসুদ কমলে পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপন তুলনামূলক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে সেগুলোর দাম বাড়ে। এতে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগে আগ্রহী হন। উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে, ডলারের চাপ কমে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.