দেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগান-চাহিদার ভারসাম্য ঠিক রাখতে ডলারের বাজারে নিয়মিত হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে আজ ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
মাল্টিপল প্রাইস অকশন (এমপিএ) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এ ক্রয়ে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট ছিল প্রতি ডলার ১২২ টাকা ২৭ থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মোট ডলার ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১৪ মিলিয়ন বা আড়াই বিলিয়ন ডলার।
আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একদিকে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে এবং অন্যদিকে চাহিদা কমে আসায় দামের ওপর নিম্নমুখী চাপ রয়েছে। এতে ডলারের দাম বেশি কমে গেলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয় প্রেরণকারীরা অনুপ্রাণিত না-ও হতে পারেন। এই পরিস্থিতি এড়াতে এবং ডলারের মূল্যকে একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে যেতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করছে।
আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত মে মাসে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংকগুলো চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এলসি খোলার প্রবণতা বৃদ্ধি, রমজান সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি এবং আমদানি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে।
আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের আগে চাহিদা বাড়া স্বাভাবিক, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন একই সময়ে বাজার থেকে ডলার কিনছে, তখন দাম বাড়ার চাপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। বছরের শেষের দিকে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত মুনাফা নিতে প্রায়ই ডলারের দাম বাড়ায়। এতে আমদানির খরচ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, বাজারে কৃত্রিম হস্তক্ষেপ নয়; ডলার কেনা হচ্ছে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ডলারধারী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এর ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কেনা হচ্ছে যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্যের ৫৫৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। একই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এলসি খোলা হয় ২ হাজার ৯৪১ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। তবে প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ৭৪ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ সময়ে বিভিন্ন পণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৭১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) এক হাজার ৩০৩ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলারের (১৩ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) সমপরিমাণ বৈদেশিক অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.